মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল আলোচিত আলাস্কা বৈঠক কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি বা চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রায় তিন ঘণ্টা এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ আখ্যা দিলেও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট চুক্তি হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনো লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়নি। তার ভাষায়, “পরবর্তীতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চান, তবে এজন্য ‘সংঘাতের মূল কারণ’ সমাধান করতে হবে। এই বক্তব্যকে অনেকেই দেখছেন রাশিয়ার কঠোর অবস্থান অপরিবর্তিত থাকার ইঙ্গিত হিসেবে।
সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিক্রিয়া
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি। পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠককে “খুব ভালো” বলে আখ্যা দেন এবং আলোচনার নম্বর “১০ এর মধ্যে ১০” দেন। তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, হয়তো আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করবেন।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৈঠকটিকে “খুবই ইতিবাচক” বলেছেন। যদিও বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের চুক্তিহীন বৈঠক তার ‘চুক্তির কারিগর’ হিসেবে প্রচারিত ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে।
ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আলোচনার পর তিনি জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। বিশ্লেষকদের মতে, একপাক্ষিক কোনো ছাড় বা চুক্তি না হওয়ায় ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্ররা সাময়িক স্বস্তি পেতে পারে। তবে পুতিনের “সংঘাতের মূল কারণ” সমাধানের বক্তব্য ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বৈঠকের সমাপ্তি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আলোচনা শেষে পুতিন ও ট্রাম্প আলাস্কা ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দেন। বৈঠকে দুই নেতার সঙ্গে আরও দুজন করে কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। যদিও কোনো অগ্রগতি হয়নি, তবে শিগগিরই আবার বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন। তার প্রস্তাব, পরবর্তী বৈঠক মস্কোতে হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আলাস্কার এই বৈঠক আসলে কোনো বাস্তব অর্জন বয়ে আনেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই রয়ে গেছে, আর আন্তর্জাতিক মহল নজর রাখছে ট্রাম্পের ঘোষিত সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞার দিকে।