জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সরাসরি ভোটের দাবি বহুদিনের। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহ ও আপত্তির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নারী অধিকারকর্মীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ঐকমত্য কমিশনের সাত সদস্যের মধ্যে কোনো নারী নেই। শেষ বৈঠকের ছবিতে ৪৫ জনের মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র ৪ জন। অথচ চার দশকের বেশি সময় ধরে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নারী রয়েছেন, তিন দশকের বেশি সময় সরকার পরিচালনাও করেছেন তারা।
প্রস্তাব ও আপত্তি
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সংসদীয় আসনের সংখ্যা ৬০০ করার প্রস্তাব দেয়, যার অর্ধেক নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা থাকবে। সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ১০০ সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব দিয়েছিল—একটি ‘ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে’, অন্যটি নির্দিষ্ট আসনে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো এতে একমত হয়নি।
শেষে ঐকমত্য কমিশন ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ধাপে ধাপে নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়—প্রথমে ৫%, পরে ১০%, এবং পর্যায়ক্রমে ৩৩% পর্যন্ত। কিন্তু সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা থাকছে না।
নারী সংগঠনের ক্ষোভ
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “নারীদের সাথে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। আমরা ১৫০ সংরক্ষিত আসন চাই, সরাসরি ভোট চাই।” সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামও সিদ্ধান্তকে ‘পুরুষতান্ত্রিক পশ্চাৎপদ চিন্তার প্রকাশ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’ মোট ৪৫০ আসন প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে ১৫০টি নারীদের জন্য সংরক্ষিত ও সরাসরি নির্বাচিত হবে।
রাজনৈতিক দলের অবস্থান
ধর্মভিত্তিক দলগুলো সরাসরি নির্বাচনের বিপক্ষে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জানিয়েছে, তারা সংরক্ষিত আসনে নারী এমপি দিতে পারবে, কিন্তু সরাসরি প্রার্থী দেবে না। বিএনপি ১০০ সংরক্ষিত আসনে রাজি হলেও সরাসরি ভোট চায় না; বরং ধাপে ধাপে নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে।
বিশ্লেষকদের মতামত
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “এটা হতাশাজনক। রাজনৈতিক দলের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে উন্নতি হবে না।” অন্যদিকে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এখন রাজনৈতিক চাপই সমাধান আনতে পারে—“কেউ কাউকে অধিকার দেয় না, অর্জন করতে হয়।”