সর্বশেষ

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেন এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেন।

একুশ বছরেও বিচার অসম্পূর্ণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত ও ভয়াল এক দিন

জুলাই সনদের সূচনা ও কয়েকটি দফা নিয়ে আপত্তি বিএনপিরঃ সালাহউদ্দিন

উপদেষ্টার এপেনডিক্স ও রাষ্ট্রীয় রোগতত্ত্বের মহাকাব্য

বিশ্ববিদ্যালয়-আদালতে জামায়াতের লোক, আর আমরা ঘাট দখল করছিঃ বিএনপি নেতা আলতাফ

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী।

থানার ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্য ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত সহকর্মী

সাবেক মেজরের স্ত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, ব্রিগেডিয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত বোর্ড গঠন

ধর্মভিত্তিক দলগুলো সরাসরি নির্বাচনের বিপক্ষে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জানিয়েছে, তারা সংরক্ষিত আসনে নারী এমপি দিতে পারবে, কিন্তু সরাসরি প্রার্থী দেবে না। বিএনপি ১০০ সংরক্ষিত আসনে রাজি হলেও সরাসরি ভোট চায় না; বরং ধাপে ধাপে নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে।

‘নতুন’ বাংলাদেশেও রাজনীতির জটিলতায় আটকে নারী প্রতিনিধিত্ব

নাদিরা ইয়াসমিনকে হয়রানি ও ওএসডির প্রতিবাদে পেন ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি

“ঐকমত্য কমিশন পুরোপুরি ‘বয়েজ ক্লাব’। নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে যেভাবে অপমানজনক মন্তব্য হয়েছে, সরকার তার প্রতিবাদে কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি।”— শাহীন আনাম


“এই দয়া-দাক্ষিণ্য কেন? পোশাক খাতে রেমিট্যান্সের অর্ধেকের বেশি অবদান নারীদের। সেখানে মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব কেন?”— ফারাহ কবির

রাজনৈতিক দলের অনাগ্রহের সমালোচনা, নারীর জন্য আসন বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচনের আহ্বান

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহ

প্রকাশিত: ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০০:২২
“ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোনো নারী প্রতিনিধি ছিল না এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।”— রাশেদা কে চৌধূরী
সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহ

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন নারী অধিকারকর্মীরা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহ ও মতপার্থক্যের কারণে এ দাবির বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত।

 

দলীয় আনুকূল্যনির্ভর বর্তমান ব্যবস্থায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা নেই। ফলে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে ওঠে না। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রীয় সংস্কার আলোচনায় এ বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপিত হলেও দলগুলো একমত হতে পারেনি।

 

বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব

 

সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন উভয়েই সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার এবং সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতে, নির্দিষ্ট ১০০ আসনে কেবল নারী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হবে।


নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ৪০০টি একক আসনের মধ্যে ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি তোলে।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান

 

দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমে সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত করে প্রতিটি দলে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব দেয়, তবে এটিতেও একমত হয়নি দলগুলো। পরে কমিশন ধাপে ধাপে নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়—প্রথমে ৫%, পরে ১০%, এরপর প্রতি নির্বাচনে ৫% করে বাড়িয়ে ৩৩% পর্যন্ত। বিদ্যমান ৫০ আসন ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।

 

নারীর অংশগ্রহণের ইতিহাস

 

১৯৭৩–১৯৭৫ প্রথম সংসদে ছিল ১৫ সংরক্ষিত আসন। ১৯৭৯–১৯৮২ মেয়াদে ২ জন সরাসরি নির্বাচিত ও ৩০ সংরক্ষিত মিলিয়ে ৩২ নারী এমপি। ১৯৮৮–১৯৯০ চতুর্থ সংসদে সংরক্ষিত আসন ছিল না। ১৯৯১–১৯৯৫ পঞ্চম সংসদে মোট ৩৫ নারী এমপি। ২০০১–২০০৬ অষ্টম সংসদে ৭ জন সরাসরি ও ৪৫ সংরক্ষিতসহ মোট ৫২ জন। নবম সংসদে (২০০৯–২০১৩) ২১ সরাসরি ও ৫০ সংরক্ষিতসহ মোট ৭০ জন। দশম সংসদে ৬৮, একাদশে ৭৩ এবং দ্বাদশে ৬৯ জন নারী এমপি ছিলেন।

 

দলগুলোর প্রস্তাব

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  • বিএনপি: ১০০ আসনে উন্নীত ও আসনসংখ্যার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে বণ্টন।
  • জামায়াতে ইসলামি: পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০ নারী আসন।
  • এনসিপি: প্রতিটি দলে ১০–১৫% নারী প্রার্থী মনোনয়ন; যারা হেরে যাবে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ১০০ জন হবেন সংরক্ষিত নারী এমপি।
  • নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন: সংসদে আসন ৬০০ করে এর মধ্যে ৩০০ নারী আসন, সরাসরি নির্বাচন।

 

সমালোচনা ও ক্ষোভ

 

নারী অধিকারকর্মী ও সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী অভিযোগ করেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোনো নারী প্রতিনিধি ছিল না এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিন বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি নারীকে সরাসরি নির্বাচনে অনাগ্রহী করে রেখেছে।
বিএনপির সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, ৫৩ বছরে নারী আসন বাড়লেও নারীর রাজনৈতিক পথ সুগম হয়নি, বরং পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রাধান্য পেয়েছে।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে রাজি করানো সম্ভব হয়নি; এখন নাগরিক সমাজকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে নারীরা সামনের সারিতে ছিল—তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় রাখতে হবে।

সব খবর