সর্বশেষ

মতামত

অগ্নিমূল্যের বাজারে দিশেহারা জনজীবন

প্রকাশিত: ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭:০৬
অগ্নিমূল্যের বাজারে দিশেহারা জনজীবন

“অগ্নিমূল্য” বাজার শুধু পকেটই পোড়াচ্ছে না, মানুষের ভেতর ক্ষোভ-অসন্তোষকে বিস্ফোরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রণহীন। এক হালি ডিম ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সবজির বাজারেও স্বস্তি নেই; কাঁচা পেঁপে ছাড়া ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, আর সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের এই লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে।

 

সরকারি তদারকির ব্যর্থতা

 

বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারের অসংখ্য সংস্থা থাকলেও কার্যত কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। টিসিবি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা বাজার পরিদর্শনের ঘোষণাগুলো সবই কাগুজে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো সুযোগ পেলেই দাম বাড়াচ্ছে, ভোক্তাদের পকেট কাটছে, আর প্রশাসন কেবল আশ্বাস দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে।

 

মৌলিক চাহিদা পূরণে ভোগান্তি

 

খাদ্যপণ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। অথচ তা পূরণ এখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। মজুতদারির মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করা, পরিবহন ব্যয়ের অজুহাত, কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দামের অগ্নি-খেলা সব মিলিয়ে ভোক্তারা যেন জিম্মি।

সীমিত আয়ে টিকে থাকা কঠিন

 

একজন দিনমজুরের দৈনিক আয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার বেশি নয়। অথচ শুধু ডিম, মুরগি ও সবজি কিনতেই তার পুরো দিনের আয় ফুরিয়ে যায়। ফলে পরিবার চালানো তাদের জন্য হয়ে উঠছে দুঃসাধ্য। খাদ্যে স্বনির্ভর একটি দেশে বাজার করতে গিয়ে মানুষ যদি আতঙ্কিত হয়, তবে তা সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।

 

বাড়তি চাপের শিকার মানুষ

 

শুধু ডিম-সবজি-মুরগি নয়, চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। মসলার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। কোটি কোটি নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ একবেলা না খেয়ে থাকছে, অন্যবেলা অর্ধেক খাচ্ছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী আর্থিক অনটনে স্কুল ছাড়ছে। সরকারি ভাতা বন্ধ, কর্মসংস্থানের অভাব, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস সব মিলিয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

 

বেকারত্ব ও রিকশা নির্ভরতা

 

শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকারের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে রিকশা। কিন্তু অতিরিক্ত রিকশার কারণে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। আগে একজন চালক দিনে ১৫০০ টাকা আয় করলেও এখন তা নেমে এসেছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। ভাড়া ও খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এই আয়ে তার পরিবার চালানো প্রায় অসম্ভব।

 

দুর্নীতি ও অযোগ্যতার ছোবল

 

উন্নত ও সমৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন আজ দুর্ভিক্ষের দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। পাহাড়সম দুর্নীতি রাষ্ট্রযন্ত্রকে পঙ্গু করে ফেলেছে। উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সচিব, এমনকি পিয়ন পর্যন্ত দুর্নীতির দৌরাত্ম্যে নাজেহাল মানুষ। দুদক আজ দুর্নীতির ভারে নিজেই ন্যূয়ে পড়েছে। লোপাট, চাঁদাবাজি আর কমিশন বাণিজ্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। অযোগ্যদের শাসন ও দায়িত্বহীনতার ফলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।

 

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন, মানুষের জীবন দুর্বিষহ, ক্ষুধা-দারিদ্র্য বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত কাগুজে আশ্বাসের বাইরে এসে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সিন্ডিকেট ভেঙে বাজারে স্বচ্ছতা আনা, টিসিবির কার্যক্রম জোরদার করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর নীতি গ্রহণ ছাড়া এই অগ্নিমূল্যের দহন থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে না। নইলে ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষোভ একসময় রাস্তায় ফেটে পড়বে, আর তখন শুধু অর্থনীতি নয় রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়বে।

সব খবর