সর্বশেষ

মতামত

বাংলাদেশ-পাকিস্তান কনফেডারেশনের ষড়যন্ত্র, স্বাধীনতার শেকড় উপড়ে ফেলার নীলনকশা

প্রকাশিত: ২০ অগাস্ট ২০২৫, ১৬:৩৫
বাংলাদেশ-পাকিস্তান কনফেডারেশনের ষড়যন্ত্র, স্বাধীনতার শেকড় উপড়ে ফেলার নীলনকশা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর জাতি আবারও এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ষড়যন্ত্রটি কেবল ক্ষমতা দখলের লড়াই নয়, বরং রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও বাঙালির আত্মপরিচয় ধ্বংস করার এক সুপরিকল্পিত পাকিস্তানি কনফেডারেশন প্রকল্প। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি, বিদেশি প্রভু ও দেশীয় দোসররা এক হয়ে এ নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের ছায়াশাসনে টেনে নেওয়া।

 

পাকিস্তানি ছকের নীলনকশা

 

আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত রূপায়ণ হচ্ছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, হেফাজত, চরমোনাই, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, জোনায়েদ সাকি প্রমুখ দলকে এক ছাতার নিচে এনে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা নকশা সাজাচ্ছে। এদের প্রধান কৌশল একতরফা নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা, যাতে সংসদের ভেতর থেকেই “বাংলাদেশ পাকিস্তান কনফেডারেশন” ঘোষণা দেওয়া যায়।

 

এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি বিপথগামী অংশ সরাসরি জড়িত এমন অভিযোগ একাধিক সূত্র থেকে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আদর্শের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামোয় অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধীরে ধীরে পাকিস্তানপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হচ্ছে।

 

ইতিহাস মুছে ফেলার ভয়ংকর চেষ্টা

 

পাকিস্তানি পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে তার ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ইতোমধ্যেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার পরিকল্পনা, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া, স্বাধীনতা স্তম্ভ ধ্বংস, জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলার মতো নোংরা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে।

 

এ কেবল ভাঙচুর নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়কে হত্যা করার চেষ্টা। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে তার ইতিহাস ধ্বংস করতে হয়, তার আত্মপরিচয় মুছে দিতে হয়। পাকিস্তান তাই করছে যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বংশধরদের প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা ও গণমাধ্যমের শীর্ষপদে বসিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিঃশেষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

 

মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার, পাকিস্তানকে বৈধতা

 

সবচেয়ে ভয়ংকর কৌশল হলো মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে স্বাধীনতাকে ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করা। পাকিস্তান ভাঙার দায়ভার ভারতের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জন্মকে অবৈধ প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের অস্তিত্বকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নয়, বরং পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে দেখানোর অপপ্রয়াস চলছে।

 

এই চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি ভেঙে পড়বে। পাকিস্তানি দোসররা তখন দাবি তুলবে“স্বাধীনতা ভুল ছিল, পাকিস্তানই ছিল প্রকৃত রাষ্ট্র।” আর সেখান থেকেই কনফেডারেশনের ঘোষণাকে তারা বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করবে।

 

ড. ইউনূসঃ পাকিস্তানি কনফেডারেশনের মুখপাত্র

 

এই ষড়যন্ত্রের পেছনে উঠে আসছে এক নাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আন্তর্জাতিক প্রভুদের ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে এমন এক অন্ধকারে নিয়ে গেছেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে কোণঠাসা করে পাকিস্তানপন্থীদের একচেটিয়া জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি–জামায়াতসহ মৌলবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে তার গোপন সমঝোতা ও আসন ভাগাভাগীর প্রচেষ্টা এ ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানি কনফেডারেশন প্রকল্পের মূল নকশাকার।

 

বিপন্ন স্বাধীনতা, নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার আগে জেগে ওঠা

 

আজ বাংলাদেশের জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে এটি কেবল রাজনৈতিক পালাবদলের খেলা নয়। এটি রাষ্ট্র ধ্বংসের মহাঅভিযান। পাকিস্তানের কনফেডারেশনের নামে বাঙালির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আত্মপরিচয়কে বিসর্জন দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

 

যদি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির এই পরিকল্পনা সফল হয়, তবে আমরা আর স্বাধীন বাংলাদেশ পাবো না। আমরা আবার পাকিস্তানের ছায়ায় পরাধীন জাতিতে পরিণত হবো। বঙ্গবন্ধুর রক্ত, শহীদের আত্মত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রাম সব কিছু মিথ্যা হয়ে যাবে।

 

জনগণের শপথ

 

এই সময়ে নীরব থাকা মানে স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে ফেলা, জনগণকে সতর্ক করা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে যদি জাতি জেগে ওঠে, তবে কোনো পাকিস্তান, কোনো ষড়যন্ত্র আমাদের দমাতে পারবে না।

 

বাংলাদেশ কারো দয়ার ভিক্ষায় পাওয়া রাষ্ট্র নয়। এটি আমাদের রক্তে কেনা স্বাধীনতা। পাকিস্তানি কনফেডারেশনের নামে এই স্বাধীনতাকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না দেওয়া উচিত নয়। এবার জাতির শপথ হোক বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে, মুক্ত থাকবে, পাকিস্তানপন্থীদের কনফেডারেশনকে রক্ত দিয়েও প্রতিহত করা হবে।

সব খবর