ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সব কালে, সব যুগে সৃষ্টি হয় না। যুগ-যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতে গোনা এক-আধজনই কেবল ইতিহাসের পাতায় “মহানায়ক” হিসেবে স্থান করে নিতে পারেন। ইতিহাস তার আপন তাগিদেই এমন মহানায়কের উদ্ভব ঘটায়, আর সেই মহানায়ক হয়ে ওঠেন ইতিহাস রচনার প্রধান কারিগর ও স্থপতি।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তেমনই এক কালজয়ী মহাপুরুষ—যিনি কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, ছিলেন জাতির পিতা, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার স্থপতি। তিনি শুধু স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেননি, সেই স্বপ্ন জাতিকে দেখিয়েছিলেন; আবার নিজের নেতৃত্বে, সংগ্রামে ও ত্যাগে সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন।
শেখ মুজিবের রাজনীতি ছিল মানুষের মুক্তির রাজনীতি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা দাবি, অসহযোগ আন্দোলন, এবং অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই তিনি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাণশক্তি। পাকিস্তানি শাসকদের দমন-পীড়ন, কারাবাস ও ষড়যন্ত্র তাকে দমাতে পারেনি। বরং প্রতিটি বাধা তাকে আরও দৃঢ়, আরও অদম্য করে তুলেছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংস গণহত্যার মধ্যেও তার নির্দেশনায় জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক লড়াই চালিয়েছে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতা এনে দেননি, তিনি চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এক সোনার বাংলা গড়তে। রাষ্ট্র গঠনের অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যদিও ঘাতকের বুলেট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তার জীবনাবসান ঘটায়, তবুও তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
আজও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির প্রেরণা, সাহস ও ঐক্যের প্রতীক। তিনি প্রমাণ করে গেছেন একজন সত্যিকার মহানায়ক জাতির ভাগ্য পাল্টাতে পারেন, ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারেন। তাই যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হবে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও গৌরবের সাথে।