সর্বশেষ

বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় পাকিস্তানি সংবাদপত্রঃ ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ ফিরে পাওয়ার অলীক স্বপ্ন

প্রকাশিত: ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ১৭:৪২
“পাকিস্তানকে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে পূর্ব পাকিস্তানকে পুনরায় ফেডারেশনের অংশ হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে। ইতিহাস দ্বিধাকে ক্ষমা করবে না; এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।” — তাবাসসুম মোয়াজ্জম খান
বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় পাকিস্তানি সংবাদপত্রঃ ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ ফিরে পাওয়ার অলীক স্বপ্ন

পাকিস্তানের অনলাইন পোর্টাল দ্য ক্যাচলাইন-এ প্রকাশিত একটি মতামতধর্মী কলাম নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। লেখক তাবাসসুম মোয়াজ্জম খান তার কলামে ১৯৭১ সালের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দাবি করেছেন, পাকিস্তানের জন্য এখনই “ঐতিহাসিক সুযোগ” তৈরি হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানকে ফেরত আনার।

 

কলামে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী “সরাসরি হস্তক্ষেপ” করে মুক্তিবাহিনীকে সমর্থন দেন, যার ফলে পূর্ব পাকিস্তান “মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন” হয়। লেখকের ভাষায়, ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ ও প্রচারযুদ্ধ পাকিস্তানের পরাজয়ের জন্য দায়ী এবং এর মাধ্যমে জন্ম নেয় বাংলাদেশ, যা “দেশদ্রোহী শেখ মুজিবুর রহমানের” নেতৃত্বে ভারতীয় স্বার্থে পরিচালিত হয়েছিল।

 

খান লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি জেনারেল এ. এ. কে. নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য পাকিস্তানের জন্য বিগত ৫৪ বছর ধরে “অপমান ও বেদনার প্রতীক” হিসেবে রয়ে গেছে।

 

কলামে আরও বলা হয়, মুজিব হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও ভারতীয় প্রভাব প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালে তাকে হত্যা করা হলে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসেন। লেখকের দাবি, ভারত তাকে দুর্বল করতে ব্ল্যাকমেইল করেছিল, যদিও কিছু ক্ষেত্রে তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন।

 

উদাহরণ হিসেবে কলামে উল্লেখ করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামী নেতা প্রফেসর গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আজমীর সেনা জীবনের সূচনার কথা। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকায় আজমীর নিয়োগের বিরোধিতা সত্ত্বেও এরশাদ তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করেন।

 

আজমীকে কলামে “পাকিস্তানের একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তার বাংলাদেশ সংবিধান, পতাকা ও জাতীয় সংগীত প্রত্যাখ্যান, পহেলা বৈশাখের সমালোচনা এবং মুক্তিবাহিনীর বিরোধিতার উল্লেখ করা হয়েছে।

 

লেখকের দাবি, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে আজমী সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হন। কলামে হাসিনাকে “ভারতের দালাল” হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশকে “দিল্লির উপগ্রহ রাষ্ট্রে” পরিণত করেন।

 

তবে ২০২৪ সালের আগস্টে জামায়াতে ইসলামী এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে মুসলিম প্রধান বিক্ষোভে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। এরপর ড. ইউনুস পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ নেন। ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর আজমীর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং তাকে পূর্ণ সুবিধাসহ অবসর দেওয়া হয়।

 

তবু কলামিস্টের দাবি, এটি যথেষ্ট নয়। তিনি আজমীর পুনর্বহাল, চার তারকা জেনারেল পদোন্নতি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ বা অন্তত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দাবি করেছেন।

 

কলামের উপসংহারে বলা হয়েছে, “পাকিস্তানকে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে পূর্ব পাকিস্তানকে পুনরায় ফেডারেশনের অংশ হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে। ইতিহাস দ্বিধাকে ক্ষমা করবে না; এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”

সব খবর