দৈনিক জনকণ্ঠের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ঘিরে সম্প্রতি যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এক বিতর্কিত নাম—অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান, যিনি অতীতে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইতে ১১ বছর কর্মরত ছিলেন এবং সাংবাদিক মহলে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
সম্প্রতি জনকণ্ঠ সম্পাদক শামীমা এ খান অভিযোগ করেছেন, ‘ষড়যন্ত্র করে জনকণ্ঠ ভবনে মব সৃষ্টি করে’ পত্রিকাটি দখল করা হয়েছে এবং এর মূল সংগঠক হিসেবে তিনি আফিজুর রহমানকে দায়ী করেছেন। শামীমার দাবি, আফিজ পুরনো কর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন লোকজন এনে পত্রিকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আফিজ বলেন, “এই অভিযোগ মিথ্যাচার। আমি এর সাথে কোনোভাবেই জড়িত নই।” তিনি দাবি করেন, চাকরির সময় তিনি যা করেছেন, তা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন হিসেবেই করেছেন।
তবে জনকণ্ঠের দখল-সংশ্লিষ্ট এই আলোচনায় উঠে এসেছে তার অতীত ভূমিকা, যা আরও বিস্তৃত। ডিজিএফআইতে কর্মরত থাকাকালীন তিনি সাংবাদিকদের হেনস্তা, সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রণ, প্রেস ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। এশিয়ান এজ সম্পাদক শোয়েব চৌধুরী জানান, ২০১৯ সালে আফিজ ডিজিএফআই কার্যালয়ে তাকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেন এবং দীর্ঘ সময় আটকে রাখেন।
সাংবাদিক মুক্তাদীর রশীদ রোমিও আফিজের বিরুদ্ধে তার ওপর বারংবার হয়রানির অভিযোগ ফেইসবুকে তুলে ধরেছেন। তার দাবি, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মেজর আফিজই ডিজিএফআইয়ের হয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করতেন, এমনকি আমাকে বিভিন্ন অফিসে ব্লক করার নির্দেশনা দিতেন।”
আফিজুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর আফিজ নাফিজের মালিকানাধীন দৈনিক বাংলা-তে নির্বাহী পরিচালক হন এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এও দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে তার সখ্যতাও প্রকাশ্যে এসেছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে আফিজ দাবি করেন, এসব ছবি বা সম্পর্ককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “কেউ যাচাই না করেই আমাকে নিয়ে মন্তব্য করছেন। এগুলো সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল।”
জনকণ্ঠ নিয়ে বিরোধ প্রসঙ্গে আফিজ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তার মা অসুস্থ থাকায় তিনি হাসপাতালে ব্যস্ত ছিলেন এবং অফিসের বিষয়ে নজর দেওয়ার সুযোগ পাননি। তবে তিনি স্বীকার করেন, “সম্পাদকের ছোট ছেলের সিদ্ধান্তে সাতজন কর্মী চাকরি হারান, সেখান থেকেই মূল সমস্যা শুরু।”
আফিজ বলেন, “শনিবার অফিসে যাইনি, রোববার থেকে অফিসের গাড়িও ব্যবহার করিনি। আমি অফিস ছেড়ে দিতে যাচ্ছি।”
একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, ডিজিএফআইতে কাজ করার সময় তার সাংবাদিকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং কোনো হেনস্তা বা অন্যায় আচরণে তিনি জড়িত ছিলেন না। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও অস্বীকার করে বলেন, “আমার কাজ ছিল কেবল একজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলা। কে প্রার্থী হবেন, সেটি সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার দায়িত্ব ছিল না।”
সবশেষে আফিজুর রহমান বলেন, “মিস কমিউনিকেশন হচ্ছে, অনেকে না জেনেই মন্তব্য করছেন। পুরো চিত্র পরিষ্কার হলে বাস্তবতা বোঝা যাবে।”