গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংস্কার অঙ্গীকারের পরও সাংবাদিকদের কারাবন্দি থাকার ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। গণ অভ্যত্থানের এক বছর পরও ছয় সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি, এবং বর্তমানে কমপক্ষে ১১ জন সাংবাদিক কারাগারে রয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (RSF)-এর প্রতিবেদন মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও বিচারিক স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো অধিকাংশই পূর্ববর্তী সরকারের সময় দায়ের করা, কিন্তু বর্তমান প্রশাসন তা প্রত্যাহার বা পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়নি।
বিশেষভাবে আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
সাংবাদিক রাকিবুল হাসান: ২০২৩ সালে একটি রাজনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
সাংবাদিক রুমানা আক্তার: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে তাকে কারাবন্দি করা হয়, যদিও তার প্রতিবেদন ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই পরিস্থিতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (RSF) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“সংস্কার যদি শুধু কথায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার নীতিমালায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচারিক স্বচ্ছতা ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার থাকলেও বাস্তবায়নে প্রশাসনিক জড়তা ও রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট। সাংবাদিক সমাজের দাবি, কারাবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করে সরকারকে আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যদি সত্যিই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্তরিক হয়, তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার প্রথম পরীক্ষার ক্ষেত্র। এই মুহূর্তে সাংবাদিকদের মুক্তি ও বিচারহীনতার অবসান অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।