রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন মিনারুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। শুক্রবার সকালে নিজ ঘর থেকে মিনারুল, তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলা (৪)-এর লাশ উদ্ধার করে মতিহার থানা-পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে মিনারুল নিজের হাতে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা এবং পরে আত্মহত্যার কথা লিখেছেন। চিরকুটে উঠে এসেছে ঋণের বোঝা ও খাদ্য সংকটে ভোগার যন্ত্রণার কথা।
চিরকুটে লেখা ছিল, “আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারও কোনো দোষ নেই।” তিনি লিখেছেন, প্রথমে স্ত্রী, পরে ছেলে ও মেয়েকে হত্যা করে নিজে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। আরেকটি পাতায় তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”
চিরকুটে মিনারুল তার পরিবারের প্রতি আত্মীয়দের আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জানাজায় অংশ না নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি লিখেছেন, “আমার বাবা যেন কাফনের জন্য টাকা না দেয়, এটা আমার কসম।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করা যাবে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মিনারুল দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ছিলেন। তার পরিবারে খাদ্য সংকট ছিল বলেও জানা গেছে। পুলিশ বলছে, চিরকুটে উল্লেখিত তথ্য ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট তদন্ত করে দেখা হবে।
এই ঘটনা এলাকায় শোক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।