ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখলমুক্ত করতে গত সপ্তাহে দুই দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে এ অভিযানে নিয়ম-নীতি মানা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ও স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার অভিযানের শেষ দিনে সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদের বাগানবাড়ি (বাংলো) ও সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয়। এর আগে বুধবার অভিযানের প্রথম দিনে ওই বাড়ির একটি অংশ ভাঙা হয়েছিল।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের কাউটাইল ডকইয়ার্ড এলাকায় অভিযান শুরু হয়ে দোলেশ্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়। এ সময় নদীর তীর দখল করে নির্মিত এমন অভিযোগ এনে নসরুল হামিদের বাড়িসহ বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে নসরুল হামিদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, উচ্ছেদ অভিযানের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “এই বাড়িটির রয়েছে বহুযুগের ইতিহাস। ১৯৬২ সালে ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন এটি নির্মাণ করেছিলেন। উনার পাবনা কোল্ড স্টোরেজ লি: নামের একটা প্রতিষ্ঠান ছিল। পরবর্তীতে তাঁর উত্তরাধিকারগণ ২০০৯ সালে হামিদ গ্রুপের কাছে জায়গাটি বিক্রি করে দেন এবং ২০১৩ সালে রেজিস্ট্রেশন হয়। উচ্ছেদ অভিযানের নামে এখানে শতবর্ষী অনেক গাছপালাও কেটে ফেলা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, সীমানা প্রাচীর থেকে ২০ ফিট ভেতরে নির্মিত ছিল পুরনো ভবনটি। বাড়িটি যে অবস্থায় ক্রয় করা হয়েছিল সে অবস্থাতেই ছিল। নতুন করে কোন প্রকার পরিবর্তন বা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি, শুধু ভেতরে পুরাতন ভবনের লাগোয়া অংশে স্টিল স্ট্রাকচার দিয়ে কিছু অংশ বর্ধিত করা হয়েছিল এবং শতবর্ষী গাছের পাশাপাশি নতুন করে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, “বিআইডব্লিউটিএ প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে এটি নদীর জায়গা। আমাদের কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি।”
শুধু মালিক পক্ষ নয়, স্থানীয়রাও উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও শুনানি বা আপত্তি জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ নোটিশ বা বিকল্প সমাধানের পথ না দেখিয়েই উচ্ছেদ করা হয়েছে, যা আইনি প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন।
বিআইডব্লিউটিএ—এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে—এ অভিযান কি আদৌ নদী রক্ষায় নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ, নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা?