রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও থেমে নেই গ্যাস চুরির রমরমা বাণিজ্য। শুধু দালালদের আশ্রয়দাতার মুখ বদলেছে, কিন্তু সিন্ডিকেটের ধরন একই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভুয়া আইডি ব্যবহার করে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে প্রতিটি সংযোগে ২–৩ লাখ টাকা নেওয়া হয়, এরপর প্রতি মাসে চুলাপ্রতি দেড় থেকে ২ হাজার টাকা মাসোহারা আদায় করা হয়। কলকারখানায় বৈধ সংযোগের পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ দিয়ে মাসে ৪ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করছে চক্রটি। নিম্নমানের পাইপ, রাইজার ও রেগুলেটর ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরকারি হিসাবেও এই চুরি ‘সিস্টেম লস’ হিসেবে দেখানো হয়। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সোয়া ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ধামরাইয়ের ইনডেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মালিক জানান, তিতাসের কিছু ঠিকাদার ২ কোটি টাকার বিনিময়ে সংযোগ দিতে চেয়েছিল, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। পেট্রোবাংলার তথ্যে জানা যায়, তিতাসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি অবৈধ সংযোগে জড়িত। বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও তা পুনরায় চালু করা হয়।
সাভার ও আশুলিয়ায় রাতের আঁধারে সংযোগ দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। সৈয়দবাড়ি এলাকায় আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ২টি অনুমোদিত চুলার জায়গায় ২২টি চুলা চালু রেখেছেন। তার মালিকানাধীন ৭–৮টি বাড়িতে প্রায় ৭০–৮০টি চুলা অবৈধভাবে সংযুক্ত।
নারায়ণগঞ্জে ২০১৯ সালে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ বন্ধের পর থেকেই অবৈধ সংযোগের বিস্তার ঘটে। প্রতিটি সংযোগে ২–৩ লাখ টাকা এবং মাসিক চুলাপ্রতি দেড়–২ হাজার টাকা আদায় করা হয়। রূপগঞ্জে অভিযান চালাতে গেলে হামলার শিকার হতে হয় কর্মকর্তাদের।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী, সুরাবাড়ী, বাসনসহ বিভিন্ন এলাকায় দালালদের মাধ্যমে তিতাস কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সংযোগ বিচ্ছিন্নের হার বাড়লেও লোকবল সংকটে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।