দেশের কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক—তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছে। তারল্য সংকট এতটাই প্রকট যে, গ্রাহকরা নিজেদের জমানো টাকা তুলতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো নানা অজুহাতে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে, ফলে হাজারো গ্রাহক প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে এসব দুর্বল ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে এবং ২৮ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়ে সহায়তা করেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এই অর্থ গ্রাহকের দায় পরিশোধে ব্যবহার না করে ভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নিয়ম মেনেই সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং অন্য খাতে ব্যয় করার সুযোগ নেই।
সরজমিনে ব্যাংক শাখা পরিদর্শনে দেখা গেছে, গ্রাহকরা অতি প্রয়োজনেও টাকা পাচ্ছেন না। এক্সিম ব্যাংকের নিউ ইস্কাটন শাখায় দেড় লাখ টাকা তুলতে গিয়ে এক সপ্তাহেও এক হাজার টাকা পাননি চাকরিজীবী আবদুল কাদের। একইভাবে গ্লোবাল ইসলামী, পদ্মা, সোশ্যাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহকরাও একই সমস্যায় ভুগছেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের এক গ্রাহক জানান, পাঁচদিন ঘুরেও ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারেননি। অন্য একজন বলেন, পাঁচ হাজার টাকাও পাচ্ছেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, ব্যাংকে টাকা নেই, তাই বাধ্য হয়ে ছোট অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ী মাহামুদুল হক জানান, ৫০ হাজার টাকার চেক দিলে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়, ফলে তার ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মতিঝিলের ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহক নজরুল বলেন, “ব্যাংকে টাকা রেখে মহাবিপদে আছি।”
বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা করছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “একীভূতকরণে আতঙ্কের কিছু নেই, সরকার আমানতকারীদের দায়িত্ব নেবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘসূত্রতা গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করেছে। সংকট কাটাতে সময় লাগবে, তবে ধাপে ধাপে সমাধানের চেষ্টা চলছে।