দেশজুড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম সংকটে ফেলেছে। বিশেষ করে ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের খরচ বহুগুণে বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বাজার পর্যবেক্ষণ সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে খোলা ও প্যাকেটজাত আটার দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। খোলা আটার দাম এখন ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, আর প্যাকেটজাত আটার দাম ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। একইভাবে, দেশি ও বিদেশি ডালের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দেশি মসুর ডাল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১০৫ টাকা। বিদেশি মসুর ডাল ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেলের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পামওয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা, আর প্যাকেটজাত তেল ১৬৫ থেকে বেড়ে ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সরিষার তেলও ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মধ্যবিত্ত ক্রেতারা নিত্যপণ্যের দামে হঠাৎ এমন উল্লম্ফনে হতবাক। মিরপুরের বাসিন্দা রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আগে ৫০০ টাকায় সপ্তাহের বাজার হতো, এখন ৮০০ টাকায়ও কুলায় না।” লালবাগের গৃহিণী শায়লা খাতুন বলেন, “ডাল-আটা-তেল ছাড়া তো রান্না হয় না। এখন এগুলোর দাম শুনলে রান্না না করে উপোস করতে ইচ্ছা করে।”
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার, পরিবহন খরচ এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ সংকট এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে দায়ী। তবে তারা মনে করেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো হবে।” তবে ভোক্তারা বলছেন, শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, দরকার দ্রুত ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তের মাথায় হাত—কারণ আয় বাড়ছে না, অথচ ব্যয় বেড়েই চলেছে। বাজারে স্বস্তি ফিরবে কবে, সেই প্রশ্ন এখন প্রতিটি পরিবারের মুখে মুখে।