বাংলাদেশে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) ২৫৯ শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, এ সময় ৬৪০ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ধর্ষণের শিকার শিশু ছিল ৩০৬ জন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড হেল্পলাইন (১০৯৮)-এ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা সংক্রান্ত কল এসেছে ২৬ হাজার ১০০টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২৬৫। হেল্পলাইনের মোট কল সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ লাখে, যা গত বছরের তুলনায় ১০৩% বেশি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিহত শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই ১২ বছরের নিচে। দৈবচয়নে বিশ্লেষিত ২০টি হত্যাকাণ্ডের ১২টিতে মোট ১৬ শিশুকে হত্যা করেছে আপনজন—মা, বাবা, সৎমা বা আত্মীয়। তিনটি ঘটনায় যৌন নির্যাতনের পর হত্যা এবং তিনটিতে প্রতিবেশীর পূর্বশত্রুতার কারণে শিশু নিহত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মোবাইল গেম বা মাদক সংক্রান্ত বিবাদ থেকেও খুনের ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে—ময়মনসিংহের ভালুকায় চাচার হাতে মা ও দুই শিশুর হত্যাকাণ্ড, মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, মুন্সীগঞ্জে মা কর্তৃক যমজ সন্তান হত্যা, এবং রাজধানীতে মা কর্তৃক তিন বছরের শিশু খুন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক অস্থিরতা, মানসিক অসুস্থতা, মাদকাসক্তি, দাম্পত্য টানাপোড়েন এবং নৈতিক অবক্ষয় এ ধরনের ঘটনার বড় কারণ। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুকের মতে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড পরিবারে ঘটে এবং সম্পর্কের টানাপোড়েনই এর অন্যতম কারণ।
আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, শিশুদের প্রতি সহিংসতা শুধু আইন ও ন্যায়ের ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক ব্যর্থতারও প্রতিফলন। তিনি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞরা শিশুদের জন্য নিরাপদ, ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি, পরিবারে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যোগাযোগ বাড়ানো এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন।