সর্বশেষ

বিশ্ব শিশু দিবস আজ

শিশুশ্রম নির্মূলে পিছিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৫
শিশুশ্রম নির্মূলে পিছিয়ে বাংলাদেশ

আজ ৬ অক্টোবর বিশ্ব শিশু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য—“শিশুর কথা বলব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ।” কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বাংলাদেশ এখনো শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না। বিশেষ করে পরিবহন খাতে অটোরিকশা চালানোসহ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।

 

হাতিরপুল থেকে কাটাবন যাচ্ছিল ১৫ বছর বয়সী মেরাজের অটোরিকশা। এক বছর ধরে সে রিকশা চালায়, এর আগে বাসে হেলপারের কাজ করত। তার মতো আরও অনেক শিশু রাজধানীর রাস্তায় রিকশা চালায়, যা সরাসরি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের আওতায় পড়ে।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জনে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুরা কাজ করছে কলকারখানা, পরিবহন, নির্মাণসহ নানা খাতে।

 

ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, অটোরিকশা চালানো শিশুশ্রমের নতুন ও ভয়ংকর দিক। এই খাতে কোনো নজরদারি নেই, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি বলেন, করোনার পর শিশুশ্রম প্রতিরোধ কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে, ২০২৫ সালের লক্ষ্য পূরণে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নেই।

 

এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আফজাল কবির খান বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে দরিদ্র পরিবারগুলোকে শর্তসাপেক্ষে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। শিশুকে শ্রমে না দিলেই ভাতা পাবে—এমন ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা আইন করি, আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করি, কিন্তু বাস্তবায়ন করি না।”

 

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম-মহাপরিচালক মোছা. জুলিয়া জেসমিন জানান, অটোরিকশা তাদের আওতায় না থাকায় তারা সরাসরি নজরদারি করতে পারেন না। তবে বাস-টেম্পো খাতে পরিদর্শনের উদ্যোগ চলমান।

 

বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজন করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, “দারিদ্র্য, শিশুশ্রম, সহিংসতা ও বৈষম্য এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। সম্মিলিত প্রয়াসেই শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।”

 

এই দিবসে শিশুদের কল্যাণের কথা বলার পাশাপাশি বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই। না হলে ২০২৫ সালের শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্য শুধু কাগজেই থেকে যাবে।

সব খবর