সর্বশেষ

রাজধানীতে শিশু নির্যাতনের চিত্র

শিশুদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ এলাকা তেজগাঁও ও মিরপুর

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:০৩
শিশুদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ এলাকা তেজগাঁও ও মিরপুর

রাজধানীর তেজগাঁও ও মিরপুর অঞ্চল শিশুদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে রাজধানীতে ২৫৮টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ে ৫৮টি এবং মিরপুরে ৪৮টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

 

তেজগাঁওয়ের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয় সাড়ে চার বছর বয়সী শিশু রোজা মণির ঘটনায়। গত ১৩ মে বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের কাছে তেজকুনিপাড়ার ময়লার স্তূপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শরীরে ছিল নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন—গলায় রশি, গরম পানির ফোসকা, রক্তক্ষরণ। পুলিশ ধারণা করছে, শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তাকে।

 

তেজগাঁও অঞ্চলে রয়েছে কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, নাখালপাড়া ও ফার্মগেট। এসব এলাকায় রয়েছে শত শত শিল্প-কারখানা, হোটেল, গ্যারেজ ও ফুটপাত—যেখানে শিশু শ্রমিকদের উপস্থিতি ব্যাপক। কর্মক্ষেত্রে তারা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। মিরপুরেও একই চিত্র দেখা যায়।

 

শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। নবাবগঞ্জে ২৩ সেপ্টেম্বর সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী তার শিক্ষকের হাতে নির্যাতিত হয় বলে অভিযোগ করে। মামলা হলে অভিযুক্ত শিক্ষক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারে যৌন ও শারীরিক নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, ‘গোপন রাখাই ভালো’ মনোভাব এবং দারিদ্র্য শিশু নির্যাতনের মূল কারণ। অর্থনৈতিক চাপে অনেক পরিবার শিশুকে কাজে পাঠায়, যেখানে তারা নির্যাতনের শিকার হয়।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “যেসব এলাকায় ভাসমান ও নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানেই শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে।” তিনি জানান, পুলিশের তথ্য শুধু নথিভুক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে, বাস্তবে আরও অনেক ঘটনা চাপা পড়ে যায়।

 

তিনি রাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়াই শিশু নির্যাতনের মূল কারণ,” বলেন তিনি। তেজগাঁও ও মিরপুরে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “শিশুর কল্যাণের নামে বাণিজ্য নয়, চাই কার্যকর পদক্ষেপ।”

সব খবর