বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) ২০২৫ সালে ৬৫ বছরে পা রাখল। ১৯৫৯ সালের ৩ এপ্রিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠান, যা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (EPFDC) নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে এটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এফডিসি দেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ, সম্পাদনা, ডাবিং, সেট ডিজাইন, পোশাক, মেকআপসহ নানা কারিগরি সহায়তা দিয়ে এসেছে। একসময় এখান থেকেই তৈরি হয়েছে ‘সুজন সখী’, ‘বেহুলা’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সারেং বৌ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘আবির্ভাব’-এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র। এসব সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে এফডিসির ১৮টি ইউনিটের মধ্যে বেশ কয়েকটি অকার্যকর বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। পুরনো যন্ত্রপাতি, অপ্রশিক্ষিত জনবল, এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন, ‘ফিল্ম প্রসেসিং ল্যাব’ ও ‘সাউন্ড রেকর্ডিং ইউনিট’ এখন কার্যত অচল। ডিজিটাল যুগে যেখানে পোস্ট-প্রোডাকশন, কালার গ্রেডিং, VFX-এর মতো প্রযুক্তি অপরিহার্য, সেখানে এফডিসির অবকাঠামো সেই প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ।
এফডিসির মূল ভবন ও স্টুডিওগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। ছাদের ফাটল, পানির লিকেজ, অপ্রতুল আলো ও শব্দনিয়ন্ত্রণের অভাব সব মিলিয়ে শুটিংয়ের পরিবেশ অনেকটাই অনুপযোগী। ফলে অনেক নির্মাতা বাধ্য হয়ে বেসরকারি স্টুডিও বা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, এফডিসির প্রশাসনিক কাঠামোও জটিল ও ধীরগতির। অনুমোদন, বরাদ্দ, ইউনিট ব্যবহারের নিয়ম সবকিছুতেই রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা বলছেন, এফডিসিতে কাজ করতে গেলে সময় ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়, যা সৃজনশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে আশার কথা হলো, সরকার এফডিসিকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নতুন ভবন, ডিজিটাল যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক মানের পোস্ট-প্রোডাকশন সুবিধা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন দ্রুততা, স্বচ্ছতা ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে গড়ে ওঠা এফডিসি শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ। তাই এর দুরবস্থা শুধু একটি ভবনের নয়, বরং একটি শিল্পের সংকট। ৬৫ বছর পূর্তিতে এফডিসিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সময় এখনই যাতে এটি আবারও হয়ে উঠতে পারে চলচ্চিত্রের স্বপ্নভবন।