বীরভূমের বোলপুর থেকে আরও আধ ঘণ্টা পথ। সেই পথ পেরিয়ে মোহনপুর গ্রামের নিরিবিলি প্রান্তে গড়ে উঠেছে ব্রাত্য বসুর নতুন সিনেমা ‘শেকড়’-এর শুটিং সেট। দুপুরের ঝলমলে রোদ, মাটির ঘর, পাকা গাছ আর পাখির ডাক এই বাস্তব গ্রামীণ আবহেই চলছে চিত্রগ্রহণ। পরিচালক ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় কাজ করছেন দুই বাংলা ও মুম্বইয়ের গুণী শিল্পীরা সীমা বিশ্বাস, চঞ্চল চৌধুরী, লোকনাথ দে, অঙ্গনা রায় ও ঋদ্ধি সেন।
সিনেমাটির গল্পের মূল সূত্র এসেছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটগল্প ‘দ্রবময়ীর কাশীবাস’ ও ‘দাদু’ থেকে। মানবিক অনুভূতি, ভালোবাসা ও সময়ের পরিবর্তনে সম্পর্কের রূপান্তরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছবির কাহিনি। পরিচালক নিজেই লিখেছেন চিত্রনাট্য, যেখানে প্রজন্মান্তরের টানাপোড়েনের ভেতরেও অটুট থাকে ভালোবাসার শেকড়। ব্রাত্য বসুর কথায়, “ঋতুর মতো মানুষও বদলায়, কিন্তু কিছু অনুভূতি থেকে যায় চিরন্তন। সেই ভালোবাসা নিয়েই এই গল্প।”
রোদ, মেকআপ আর থিয়েটার স্পিরিট
প্রচণ্ড গরমেও কেউ থেমে নেই। সীমা বিশ্বাসের প্রস্থেটিক মেকআপ করতে লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। মুখে ঘাম ঝরলেও তিনি হাসিমুখে বললেন, “কষ্ট ভাবলেই কষ্ট হয়। আমরা সবাই থিয়েটারের মানুষ, তাই এই অভিজ্ঞতাই আনন্দ।” পাশে দাঁড়ানো লোকনাথ দে যোগ করলেন, “এখানে কাজ মানেই পরিবারের মতো সময় কাটানো।”
রূপসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন সোমনাথ কুন্ডু। তাঁর হাতে এমন রূপ পেয়েছেন সীমা ও লোকনাথ, যে বোঝাই কঠিন কে বাস্তব আর কে চরিত্রের ছদ্মবেশে।
বাংলাদেশ থেকে গিয়ে সেট মাতালেন চঞ্চল
সোমবার বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গিয়ে সরাসরি বোলপুরে পৌঁছান চঞ্চল চৌধুরী। রোদে-ঘামে ভিজে একের পর এক শট দিচ্ছেন, আবার শুটিংয়ের ফাঁকে সহকর্মীদের সঙ্গে প্রাণখোলা হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠছেন। স্থানীয় গ্রামবাসীরাও ভিড় জমিয়েছেন শুটিং দেখতে। কেউ কেউ আবার চঞ্চলকে দেখতে পেয়ে ফোনে ভিডিও তুলছেন, কেউ বলছেন, “আমাদের দেশে ওর সিনেমা খুব চলে!”
অঙ্গনা-ঋদ্ধির নতুন জুটি
ছবিতে দ্রবময়ীর নাতনি হিসেবে অভিনয় করছেন অঙ্গনা রায়, আর রাখালের নাতি হিসেবে ঋদ্ধি সেন। মিষ্টি প্রেমের ইঙ্গিতও আছে গল্পে। অঙ্গনা বলেন, “বোলপুরে প্রথমবার শুটিং করছি। চারপাশে গুণী অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করা একেবারে স্কুলের মতো শেখার জায়গা।”
শুটিংয়ের এক পর্যায়ে ‘টপ শট’ নিতে গিয়ে কিছু মজার ঘটনাও ঘটে। সামনের বাড়ির ছাদ থেকে উৎসুক দর্শকদের নামাতে পুরো টিমের বেশ কিছু সময় লেগে যায়। সেই ফাঁকে কেউ কেউ আবার অঙ্গনাকে টিভির জনপ্রিয় চরিত্র ‘পারো’ বলে ডাকতে শুরু করে। অঙ্গনা হাসতে হাসতে বলেন, “আমার কাছে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
সীমার কুচো মাছের আবদার
গম্ভীর চরিত্রের অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস শুটিংয়ের বাইরে কিন্তু একেবারে প্রাণবন্ত। শেষ দিনে সবাইকে চমকে দিয়ে বললেন, “আজ আমি কুচো মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি! আমার জন্য বিশেষভাবে রান্না করেছে ওরা। পাবদা মাছও আমার খুব প্রিয়।” তাঁর হাসির সঙ্গে মিশে গেল শুটিং সেটের উষ্ণতা ও আপন আবহ।
ব্রাত্য বসুর ‘শেকড়’ যেন শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি দুই বাংলার শিল্পীদের এক মিলনমেলা, যেখানে গ্রামের মাটি, মানুষের ঘাম আর ভালোবাসার গন্ধ মিশে আছে প্রতিটি দৃশ্যে।