সর্বশেষ

যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা

ঋত্বিক ও প্রতীতি জন্মশতবার্ষিকী

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৫, ০০:৪৩
ঋত্বিক ও প্রতীতি জন্মশতবার্ষিকী

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুঁয়ারে পড়ল কাঁটা
যমুনা দেয় তার ভাই যমকে ফোঁটা
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।
 

বলে বোন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয়। ভাইফোঁটা। আমরা চার ভাই। বোন ছিল না। ছোটবেলায় আমাদের ফোঁটা দিতেন ঠাম্মা—টেডিপিসি, মিষ্টিপিসির মা। ঠাম্মার ছেলে সেজোকাকুর বিয়ে হলো। কাকীমনির ঘরে আমাদের প্রথম বোন হলো বর্ণা। এক বছর বয়সে প্রথম আমাদের ভাইফোঁটা দেয় বর্ণা। বোনের হাতে সেই আমাদের প্রথম ভাইফোঁটা। বর্ণার পর পূর্ণা তৃণা হয়েছে। তারা এখন আমাদের ভাইফোঁটা দেয়। ভাইফোঁটার সময় আমি বাড়িতে থাকি না। বর্ণার বিয়ে হয়ে গেছে। চিঠিযুগে পূর্ণা তৃণা সাদা কাগজে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে, ভাইফোঁটার উইশ লিখে, ধান দুর্বা সমেত পোস্ট করে দিত। চিঠিযুগ গেছে। মোবাইল ফোনের এই যুগে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে ছবিতে ফোঁটা দিয়ে, মাথায় ধান দুর্বা দিয়ে রেকর্ড করে পাঠায়। শুক্লা ঢাকায় থাকে। বাসায় এসে ফোঁটা দিয়ে যায়। আশ্বিন চীনে থাকে। ডরমিটরির দেয়ালে ফোঁটা দেয়। এ বছর সবুজ রঙের ফোঁটা দিয়েছে। ভাই দূরে থাকলে এরকম করে বোনরা। আগেও করত। ভাই দূরদেশে, প্রতিপদে দ্বিতীয়ায় বোন ঘরের পালা বা খুঁটিতে ফোঁটা দিয়ে রাখত।
 

প্রতীতি কী করতেন?
ঋত্বিক ঘটকের বোন প্রতীতি দেবী?
মেঘে ঢাকা তারা ঋত্বিক।
বাড়ি থেকে পালিয়ে ঋত্বিক।
অযান্ত্রিক ঋত্বিক।
সুবর্ণরেখা ঋত্বিক।
যুক্তি তক্কো গপ্পো আর ঋত্বিক।
তিতাস একটি নদীর নাম, ঋত্বিক।
 

সেই ঋত্বিকের জমজ বোন প্রতীতি। মেঘে ঢাকা তারার সেই বোন ছিলেন?
‘তোমার খুকী কিচ্ছু বোঝে না মা, তোমার খুকী ভারি ছেলেমানুষ।’
: মেঘে ঢাকা তারা।
রবীন্দ্রনাথ এমন কাতরতার সঙ্গে সম্ভবত আর কোনও বিন্দুতে উপস্থিত হন নাই কোনওদিন।
 

দেশ ভাগ ঋত্বিক ঘটকের বুকে আদিম করাত চালিয়ে দিয়েছিল। যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো প্রবণ ঋত্বিক আমাদের এখনও দাঁড় করিয়ে রাখতে পারেন সেই করাতের নিচে, যখন আমরা তাঁকে দেখি বা পড়ি।
 

‘কেন চেয়ে আছ গো মা?’
: যুক্তি তক্কো গপ্পো।
 

ভাইবোনের জন্ম ১৯২৫ এ। জন্মশতবার্ষিকী এ বছর।
ভাইফোঁটা গেছে কয়েকদিন আগে।
প্রতীতি ঋত্বিকের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়েছেন।
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুঁয়ারে পড়ল কাঁটা
যমুনা দেয় তার ভাই যমকে ফোঁটা
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।
 

এরপর আরও দুইটা লাইন আছে। আমাদের এলাকায় বলে, অন্য এলাকায় বলে কি না আমি জানি না। পূর্ণা তৃণা আগে লিখে দিত, এখন মোবাইল ফোনে টাইপ করে দেয়—
ও ভাই, তুমি মার্কেণ্ডেয় মুনির আয়ু পাইও
বছরে, বছরে ফোঁটা খাইও।
 

মার্কেণ্ডেয় মুনির আয়ু কত বছর ছিল?
অসীম।
চিরযুবক রূপে অমৃত বরপ্রাপ্ত বা অমর ছিলেন মার্কেণ্ডেয় মুনি।
অমর ছিলেন মানে এখনও আছেন। থাকবেন। মৃত্যু নাই।
প্রতীতির ভাই ঋত্বিকের মতো।

 

২.১১.২৫

সব খবর

আরও পড়ুন