নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক ‘আল্পনা’ সিনেমা হল এখন ‘তাবলিগী মার্কাজ মসজিদ’ নামে নতুন পরিচয়ে যাত্রা শুরু করেছে। বুধবার ভবনটিতে তাবলিগ জামাতের ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে স্মৃতি ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাবলিগের ‘আলমী শুরায়ী নেজাম’-এর প্রতিনিধি মাওলানা শহিদুল ইসলাম সরকারের কাছ থেকে ভবনটি ইজারা নিয়ে ধর্মীয় দাওয়াত কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুজ্জামান বলেন, “প্রায় ২০ বছর আগে এটি সিনেমা হল ছিল। পরে বন্ধ হয়ে যায়। এটি ভেস্টেড প্রপার্টি হিসেবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল।”
ভবনটির ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ম শাফায়াত আলী ‘টাউন হল’ নামে এর উদ্বোধন করেন। পরে এটি ‘আল্পনা’ সিনেমা হল হিসেবে পরিচিতি পায়। স্থানীয়রা জানান, দুই দশকের বেশি সময় ধরে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। আশপাশের দোকানপাট উঠে গেছে, এলাকা জঙ্গলে পরিপূর্ণ, চলাচলও কম।
সরকারের পক্ষ থেকে একই এলাকায় একটি আধুনিক মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানে ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র, নামাজের ব্যবস্থা ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
‘সাথী ভাই’ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মো. রায়হান শেখ বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ! যেখানে এক সময় গুনাহের অন্ধকার ছিল, আজ সেখানে আল্লাহর জিকির-ফিকির হবে। ঈমানের আলো ছড়াবে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। সিপিবি নড়াইল জেলার সভাপতি জি এম বরকত উল্লাহ বলেন, “মসজিদ হওয়া অবশ্যই ভালো। তবে সিনেমা হলের জায়গায় না করে অন্যত্র করলে ভালো হতো। যেহেতু কাছাকাছি একটি আধুনিক মসজিদ হচ্ছে, ভবনটি সংরক্ষণ করা যেত।”
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, “আরও অনেক জায়গা ছিল, সেখানে মসজিদ করলে ভালো হতো।” অন্যদিকে সুলতান মাহমুদ ভবনের পুরনো অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ভবনটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে।”
নড়াইলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার বলেন, “নড়াইলে এখন আর কোনো সিনেমা হল নেই। সদরে ছিল চিত্রাবাণী, লোহাগড়াতে সন্ধ্যা, আর কালিয়াতে আল্পনা। সবই এখন অতীত।”
এক সময় বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল যে স্থাপনাটি, তা এখন ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হয়ে উঠছে—এই রূপান্তর স্থানীয় সমাজে নানা প্রতিক্রিয়া ও স্মৃতির জন্ম দিয়েছে।