সর্বশেষ

“আমার শাস্তি যে অপরাধে”

প্রকাশিত: ৮ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪১
আমার অপরাধ — আমি মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে! আমার অপরাধ — আমি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলি।
“আমার শাস্তি যে অপরাধে”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাকে সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব থেকে বিরত করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ কোনো প্রশাসনিক বা একাডেমিক অপরাধের ভিত্তিতে নেওয়া হয়নি। আমার অপরাধ আমি ফেসবুকে মত প্রকাশ করেছি! 

 

আমি ২০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি! আমার বিরুদ্ধে কোনোদিন একটি ছোট্ট অভিযোগও ওঠেনি। শুধু একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

 

নিজের যোগ্যতায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়েছিলাম ২০০৫ সালে। সিন্ডিকেট আমাকে নির্বাচিতদের তালিকায় প্রথম স্থানে রেখেছিল। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলাম। অনার্স পরীক্ষায়ও প্রথম স্থান অর্জন করেছিলাম। ১৯৯৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের মানবিকের মেধা তালিকায় প্রথম হই এবং সারাদেশে সর্বোচ্চ নম্বর লাভ করি।

 

বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এবং অস্ট্রেলিয়াতে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর, ২০২৪ সালে দেশের টানে ফিরে এসেছিলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান রাখার জন্যে। তার আগে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স করেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম। ছিলাম শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩

 

আমার আসল অপরাধ আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী! ২০২৪ সালের ১ আগস্ট প্রোফাইল পিকচারে লাল রং না রেখে আমি শোকের মাসের কালো রং ধারণ করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়েছিলাম। ২০২৪-এর ১৭ জুলাই, আন্দোলনকে প্রতিক্রিয়াশীলদের আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়েছিলাম! বলেছিলাম মৌলবাদী শক্তি তরুণদের ব্যবহার করছে। ১৯৯৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের পর ভোরের কাগজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেই বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব।

 

আমার অপরাধ — আমি মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে! আমার অপরাধ — আমি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলি।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার এবং এমনকি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করে থাকেন! ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অথচ একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে!

 

আমি স্তম্ভিত, ব্যথিত এবং হতাশ। তবুও, আমি বিশ্বাস করি — একদিন সত্যেরই জয় হবে।

 

লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নাগরিক কথা থেকে আরও পড়ুন
সব খবর

আরও পড়ুন

শাহবাগে শিক্ষকদের রক্তঝরা প্রতিবাদ, লাঠির আঘাতে আহত শতাধিক শিক্ষক

শাহবাগে শিক্ষকদের রক্তঝরা প্রতিবাদ, লাঠির আঘাতে আহত শতাধিক শিক্ষক

শিশুদের গান ও খেলাধুলার নামে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র!

ব্যঙ্গ কলাম শিশুদের গান ও খেলাধুলার নামে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র!

রাজনীতির সার্কাসে সোনার বাংলায় নামিতেছে শীত, আতঙ্কের জনপদ

ব্যঙ্গ কলাম রাজনীতির সার্কাসে সোনার বাংলায় নামিতেছে শীত, আতঙ্কের জনপদ

রয়টার্সের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ, বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে হুমকি—বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতা নতুন সংকটে

মতামত রয়টার্সের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ, বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে হুমকি—বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতা নতুন সংকটে

দূষিত পানি খেয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

চট্টগ্রাম কারাগারে ভয়ংকর মানবিক সংকট দূষিত পানি খেয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

শেখ হাসিনার নীরব প্রত্যাবর্তন

রহমান বাঙ্গালি’র মতামত কলাম শেখ হাসিনার নীরব প্রত্যাবর্তন

নারীপ্রেমে উন্মত্ত জামায়াত: তিন শূন্যের মহাপরিকল্পনা

ব্যঙ্গ কলাম নারীপ্রেমে উন্মত্ত জামায়াত: তিন শূন্যের মহাপরিকল্পনা

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় হচ্ছে না নির্বাচন

মতামত নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় হচ্ছে না নির্বাচন