প্রতিদিনই গ্রামীন ব্যাংকের কোন না কোন শাখায় আগুন দেয়া হচ্ছে? যে বা যারাই আগুন দিক জনগণ হাততালি দিচ্ছে! কারণ কি? এর প্রধান কারণ আরেকটি প্রশ্নের মধ্যে আপনারা খুঁজে পাবেন। প্রশ্নটি হচ্ছে "ইস্ট-ইন্ডিয়া কোঃ ও গ্রামীন গং- এর মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি?
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোঃ ছলে বলে কৌশলে বাংলার মসনদ দখল করে সকল প্রকার ব্যবসা- বাণিজ্যের মাধ্যমে সর্ব্বোচ্চ মুনফা করতে যেভাবে নীপড়ণ-নির্যাতন চালিয়েছিল জনগণের উপর তার সাথে কি ইউনুস গংয়ের শাসনামলের মিল খুঁজে পাচ্ছেন!
ড. ইউনুস যে কত বড় মাপের চৌকষ ব্যবসায়ী বিশ্ব ইতিহাসে এর নজির ২য়টি আর খুঁজে পাবেন না। বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল একটি রাষ্ট্রের একজন ব্যবসায়ী শুধু আভ্যন্তরীণ সম্পদ এদিক ওদিক করে কূটবুদ্ধির জোরে শুধু সম্পদই আহরণ করছেন তাই নয়, একই সাথে নোবেল বিজয় এবং সর্বশেষ রাষ্ট্র ক্ষমতা।
বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ আয়ের ৬৫% এর বেশী আসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। কোন প্রকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অতি গোপনে, বিচারের আবডালে ১৭ তারিখই তিনি এই বন্দর তুলে দিলেন বিদেশী কোম্পানির হাতে। সাথে পানগাঁও বন্দরও। চুক্তিনামাও তিনি গোপন রেখেছেন। ধান্দাটা বুঝতে পারছেন? কমিশনের ওজনটা কি ক্যালকুটারে ধরবে?
বিশ্বের সর্ববৃহৎ বদ্বীপ এই বঙ্গভূমির ব্লু ইকোনমি যে কতবড় সম্ভাবনাময় তা কি আমরা জানি? এক সোনাদিয়া দ্বীপেই মিলেছে ভারী প্রাকৃতিক খনিজ ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গারনেট, জিরকন, রুটাইল ও মোনাজাইট। সোনাদিয়ায় এ ধরনের মূল্যবান খনিজ সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক সাত লাখ টন। যার মূল্য কত ট্রিলিয়ন ডলার আমরা জানি না। সেই সাথে সেন্টমার্টিন দ্বীপ- দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর স্পট যা দখলে নিতে বিশ্ব পরাশক্তি ব্যর্থ হয়েছিল বলেই মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। ড. ইউনুস কি এই অসীম সম্পদ ও সুযোগের লোভ সম্বরণ করতে পারেন? তার চরিত্র কি জাতি এখনও টের পায় নি?
রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের আগে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবৈধভাবে জালিয়াতের মাধ্যমে ২৮টি গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হলেও বেআইনিভাবে এগুলোর মালিকানা নিজের নামে করে নেন। ২০২৩ সালে শুধু ৩টি প্রতিষ্ঠনের ৫ বছরের কর ফাঁকি ছিল ১১০০ কোটি, দুদকের মামলায় যা প্রমানিত হয়েছিল।
গ্রামীন গ্রুপ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর কি পরিমান ব্যবসা বাণিজ্য, আর্থিক সুবিধা ও স্বজনপ্রীতি করেছে তা আমরা সবাই জানি। রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে যা সরাসরি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেষ্ট। তিনি নিজের নামে সকল মামলা প্রত্যাহার করেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ নিয়েছেন। ভবিষ্যতেরও কর অব্যহতি নিয়েছেন। নতুনভাবে আদম ব্যবসা, ইউনিভার্সিটি, ট্রাভেল এজেন্সি এমনকি গ্রামীণের নামে মোবাইল ওয়ালেটের পারমিটও নিয়েছেন। মোবাইল ওয়ালেটের ব্যবসাটা কত বড় যারা প্রবাসে থাকেন তারা জানেন। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে চায়ের বিল, ট্যাক্সিভাড়া, কেনাকাটা থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের প্রায় শতভাগ লেনদেন হয় মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে। যাকে বলে ক্যাশলেস সোসাইটি। এটির একক ব্যবসা করবে গ্রামীণ।
ড. ইউনুস হচ্ছে লর্ড ক্লাইভের আব্বা। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল গরীবের ব্যাংক গ্রামীন ব্যাংকের মাধ্যমে। এই গ্রামীন ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের উচ্চ সুদের জালে জড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই নিঃস্ব হয়েছে। ঠিক যেভাবে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির নীল চাষে নিঃস্ব হয়েছিল বাংলার কৃষক। অতিরিক্ত শোষণ-নির্যাতনের কারণে কৃষক বিদ্রোহ করেছিল। ১৮৫৯ সালে গড়ে ওঠা সেই বিদ্রোহ ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ বলে পরিচিত। যে বিদ্রোহে কৃষকের আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলার নানা প্রান্তে গড়ে উঠা নীলকুঠিসমূহ।
এই নীলকুঠিই ছিল কৃষক অত্যাচারের প্রাণকেন্দ্র। ফলে বিদ্রোহী কৃষকরা একেক করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল অত্যাচারের আতুর ঘর নীল কুঠি। একাবিংশের নীলকুঠি হচ্ছে গ্রামীন ব্যাংক। অগ্নিযুগে যে বিদ্রোহী কৃষকরা নীলকুঠি জ্বালিয়েছিল বৃটিশরা তাদেরকে দুষ্কৃতিকারী বলতো, যেমন বলেছিল একাত্তরেও, ২০২৫ এও ব্যতিক্রম নয়!
লর্ড ক্লাইভের শেষ পরিণতি আমরা জানি। আত্মগ্লানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেছিল। ইতিহাসে তিনি অত্যাচারী শোষক হিসেবেই ঠাঁই পেয়েছে।
কিন্তু ড.ইউনুস ক্লাইভের চেয়েও অনেক শক্ত নার্ভের অধিকারী! তার পরিণতি কি হবে তা ভবিষ্যতেই বলে দিবে।