বাংলাদেশের আকাশ আজ অন্ধকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করে ইউনূস সরকারের শাসন দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা শুধু রাজনৈতিক সংকট নয়, বরং এক ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশের মানুষকে আতঙ্ক, হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের নরকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান ভয়ঙ্কর—গত ৮ মাসে ২,৬১৬ জন খুনের শিকার হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, অথচ ন্যায়বিচারের কোনো চিহ্ন নেই। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে সাধারণ মানুষ আজ সবচেয়ে বেশি অসহায়। কারও রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেই গায়েবি মামলা, খুন কিংবা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
কেবল খুন নয়, নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতনের চিত্র আরও বিভীষিকাময়। আট মাসে ১৫ হাজার নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রতিদিন যেভাবে গণধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও অমানবিক নির্যাতনের খবর বের হচ্ছে, তা প্রমাণ করে রাষ্ট্রই অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কোনো সভ্য রাষ্ট্রে এ ধরনের অপরাধকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায় না—এটি নিছক অপরাধ নয়, বরং সুসংগঠিত গণনির্যাতন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ ও রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী, যখন নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, নির্যাতন ও দমননীতি চালানো হয়, তখন তা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা সেই সংজ্ঞাকেই স্পষ্ট করে তুলে ধরছে। প্রশ্ন হলো—একটি স্বাধীন দেশ কি এভাবে জঙ্গিবাদ ও অরাজকতার হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে?
এই শাসনের মূল লক্ষ্য হলো—জনগণকে ভয় দেখিয়ে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকা। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কোনো স্বৈরশাসনই চিরকাল টেকেনি। জনগণ একদিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে, অন্যায় ও দমননীতিকে ভেসে যেতে হয় গণআন্দোলনের ঢেউয়ে।
আজ সময় এসেছে জাতিকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করার—২,৬১৬ খুন, ১৫ হাজার নারী-শিশুর ওপর বর্বর নির্যাতন কেবল অপরাধ নয়, এটি এক নির্মম গণহত্যা ও গণনির্যাতনের চিত্র। এ দায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এড়াতে পারবে না। ইতিহাস একদিন এর বিচার করবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়া দেশ। এখানে দমননীতি, গণহত্যা বা গণনির্যাতনের স্থান নেই। তাই এ মুহূর্তে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই হতে পারে মুক্তির একমাত্র পথ।