সর্বশেষ

হারানো ভূখণ্ড ফেরানোর স্বপ্নে পাকিস্তান,বাংলাদেশ কি আবারও ষড়যন্ত্রের কবলে

প্রকাশিত: ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০০:২৮
হারানো ভূখণ্ড ফেরানোর স্বপ্নে পাকিস্তান,বাংলাদেশ কি আবারও ষড়যন্ত্রের কবলে

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের রক্তে অর্জিত এ স্বাধীনতার পেছনে ছিল পাকিস্তানি দমন-পীড়ন, শোষণ আর অবিচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম। অথচ আজও শোনা যাচ্ছে এক ভয়াবহ তথ্য বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানের প্রভাববলয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ, সামরিক যোগাযোগ, অর্থায়নের গোপন ছক ও জঙ্গি নেটওয়ার্কের পুনরুত্থান—সব মিলিয়ে এই আশঙ্কা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

 

ঘনঘন পাকিস্তানি মন্ত্রীদের ঢাকা সফর

 

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি মন্ত্রীদের ঢাকায় আসা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠছে। ২১ আগস্ট পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ঢাকায় আসছেন চার দিনের সফরে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ২৩ আগস্ট আসবেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এর আগে গত মাসে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন রাজা নাকভি। তিনি বলেছিলেন, “সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে দেশে তালেবান, লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মুহাম্মদের মতো সংগঠন প্রকাশ্যে সক্রিয়, তারা কীভাবে অন্য দেশের সন্ত্রাস দমন করবে?

 

কূটনৈতিক যোগাযোগ এখানেই থেমে নেই। গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এ ধারাবাহিকতাকে অনেকে দেখছেন পরিকল্পিত এক "রোডম্যাপ" হিসেবে।

 

পাকিস্তানি মিডিয়ার আক্রমণাত্মক প্রচারণা

 

পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ক্যাচলাইন-এ প্রকাশিত একটি কলামে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সরাসরি ভারতের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে এমনকি বলা হয়েছে এখন সময় এসেছে পূর্ব পাকিস্তানকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার।”

 

লেখক আরও দাবি করেছেন, বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আজমিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ফের নিয়োগ দেওয়া উচিত। এই বক্তব্য প্রমাণ করে পাকিস্তানের একাংশ এখনো বাংলাদেশকে "হারানো ভূখণ্ড" হিসেবে দেখে।

 

সেনা কর্মকর্তাদের রহস্যজনক সফর

 

শুধু কূটনীতিক নয়, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারাও ঢাকায় ঘনঘন আসছেন। গত জুনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তিন ব্রিগেডিয়ার ঢাকা সফর করে সরাসরি কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে যান যা একটি অতিসংবেদনশীল ঘাঁটি এবং ১০ম পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর। সাবেক এক বাংলাদেশি জেনারেল বলেছেন, “এ সফর নিঃসন্দেহে গুপ্ত উদ্দেশ্যে, কারণ স্বাভাবিক প্রটোকল অনুযায়ী রামুর মতো ঘাঁটি বিদেশি কর্মকর্তাদের সফরের আওতাভুক্ত নয়।”

 

উল্লেখ্য, রামু সেনানিবাস বর্তমানে আরাকান আর্মির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সরবরাহকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত। ফলে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ারদের সফরকে শুধু আনুষ্ঠানিক ভ্রমণ বলা কঠিন।

 

এনসিপি ও জঙ্গি নেটওয়ার্কের পুনর্গঠন

 

অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এনসিপি নামের একটি রাজনৈতিক দল আসলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করছে। তদন্তে উঠে এসেছে, কাতার ও তুরস্কভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকের মাধ্যমে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা এ দলে বিপুল অর্থ ঢালছে।

 

শুধু গত তিন মাসেই আঙ্কারা হয়ে করাচিতে পাঠানো হয়েছে প্রায় ১২.৭ মিলিয়ন ডলার, যা ঢুকেছে এনসিপির শেল অ্যাকাউন্টে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের কয়েকটি নিরাপত্তা বাহিনীতে কৌশলগত বদলি ঘটানো হচ্ছে, যেখানে জঙ্গি-সহানুভূতিশীল কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে।

 

এ ষড়যন্ত্রের পেছনে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির জটিল সমীকরণও কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই বাড়ছে। ইসলামাবাদ-দোহা-ইস্তাম্বুল অক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে কিছু পশ্চিমা শক্তি, যারা আগে ছিল জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানে।

 

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কও আবার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসিম মুনির হোয়াইট হাউসে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। এ থেকেই স্পষ্ট যে, পাকিস্তান কৌশলগতভাবে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক পাকিস্তানি উদ্যোগগুলো কেবল কূটনৈতিক নয়; এর পেছনে স্পষ্টভাবে কাজ করছে ঐতিহাসিক রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আবারও পাকিস্তানের প্রভাববলয়ে টেনে নেওয়া।

 

সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরে জঙ্গি-সহানুভূতিশীল শক্তির অনুপ্রবেশ। বাইরে থেকে অর্থায়ন ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থাকলেও, ভেতরের ঘাঁটি দুর্বল হলে দেশ রক্ষার লড়াই কঠিন হয়ে পড়বে।

 

বাংলাদেশ কোনোভাবেই পাকিস্তান নয়, আর কখনোই হবে না। মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও লাখো মায়ের অশ্রুতে অর্জিত স্বাধীনতা কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যেতে পারে না। তবে আত্মতুষ্টি বিপজ্জনক। কূটনৈতিক চালচিত্র, সামরিক যোগাযোগ ও রাজনৈতিক-জঙ্গি আঁতাত সবকিছুর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।

 

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করা, জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানে আপসহীন থাকা এবং জনগণের গণতান্ত্রিক শক্তিকে দৃঢ় করা। না হলে ইতিহাস আবারও এক ভয়াবহ পুনরাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে দেশকে।

সব খবর

আরও পড়ুন

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নাকি গ্রামীন গ্যাং কে বড় রক্তচোষা?

সুজা ইসলাম-এর মতামত কলাম ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নাকি গ্রামীন গ্যাং কে বড় রক্তচোষা?

শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্র - উভয়ের মৃত্যুদণ্ডের রায়ঃ এক প্রহসনের মঞ্চায়ন

ব্যঙ্গ কলাম শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্র - উভয়ের মৃত্যুদণ্ডের রায়ঃ এক প্রহসনের মঞ্চায়ন

জান্নাতের টিকিট: বঙ্গদেশের মহাজাগতিক খুচরা বাজারের মহাকাব্য

ব্যঙ্গ কলাম জান্নাতের টিকিট: বঙ্গদেশের মহাজাগতিক খুচরা বাজারের মহাকাব্য

সভ্যতার মৃত্যু নেই কিন্তু বিবেকের আছে

মতামত সভ্যতার মৃত্যু নেই কিন্তু বিবেকের আছে

চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের দলে ফিরিয়ে এনেছে বিএনপি

মতামত চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের দলে ফিরিয়ে এনেছে বিএনপি

চাইনিজ রাইফেল নয়, ঢাল-লাঠি হাতে ডিউটিতে যেতে চান ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা

মতামত চাইনিজ রাইফেল নয়, ঢাল-লাঠি হাতে ডিউটিতে যেতে চান ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা

হুমায়ূন আহমেদদের যুগ পেরিয়ে কাশেম বিন আবু বকরদের যুগে বাংলাদেশ?

হুমায়ূন আহমেদদের যুগ পেরিয়ে কাশেম বিন আবু বকরদের যুগে বাংলাদেশ?

নিয়তির অভিশাপে নিমজ্জিত, মাতৃভূমিকে অপবিত্র করা দুই কলঙ্কিত চরিত্র

ইদিপাস অথবা ইউনূস নিয়তির অভিশাপে নিমজ্জিত, মাতৃভূমিকে অপবিত্র করা দুই কলঙ্কিত চরিত্র