সর্বশেষ

বাংলাদেশে চীনের নয়া কূটনীতি

ভারত–আমেরিকা বিরোধী বলয় তৈরির চেষ্টা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩০
ভারত–আমেরিকা বিরোধী বলয় তৈরির চেষ্টা

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে চীনের কূটনৈতিক সক্রিয়তা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ অভিযোগ তুলেছে, চীন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবেলায় একটি বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গঠন করছে, যার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলগুলো।

 

অভিযোগকারীরা দাবি করছেন, চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত এক বছরে ধারাবাহিক রাজনৈতিক যোগাযোগ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে “ভারত–আমেরিকা বলয় দুর্বল করার কৌশল” অনুসরণ করছেন। তারা বলছেন, রাষ্ট্রদূতের বিভিন্ন বৈঠক, আমন্ত্রণমূলক সফর এবং বিশেষ রাজনৈতিক সংযোগ এই ধারণাকে আরও জোরদার করেছে।

 

নেতাদের চীন সফর নিয়ে প্রশ্ন

 

গত এক বছরে বিভিন্ন দলের নেতাদের একাধিক চীন সফর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। রাজনৈতিক সূত্রের বরাতে অভিযোগ করা হয়েছে, এসব সফরের বেশিরভাগই চীনা অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে।

 

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিএনপি, জামায়াত–শিবির, এনসিপি, এবি পার্টি এবং গণ অধিকার পরিষদের একাধিক নেতার সফর “বিশেষ সুবিধাযুক্ত” ছিল। সমালোচকরা দাবি করেছেন, সফরগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারত–যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর আঞ্চলিক কাঠামোর বাইরে একটি নতুন বলয় গঠন।

 

এনসিপি নেতাদের সফর

 

সারজিস, হাসানাত আখতার, রাফি, নাহিদসহ এনসিপির কয়েকজন নেতার একাধিক চীন সফর প্রকাশ্যে আসার পর অভিযোগ আরও তীব্র হয়। সমালোচকেরা এসব সফরকে “অবাধ”, “রাজনৈতিকভাবে সুবিধাযুক্ত” এবং “কূটনৈতিকভাবে পরিচালিত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

 

তাদের ভাষ্য, সফরগুলো কেবল দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ নয়; বরং এটি ভূরাজনৈতিক বলয় তৈরির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।

 

পকেটমানির অভিযোগ

 

রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি আলোচিত অভিযোগ হলো—চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের প্রায় শীর্ষ একশত নেতাকে নিয়মিত পকেটমানি প্রদান করছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, এটি প্রভাব বিস্তারের কৌশলের অংশ হতে পারে।

 

যদিও এ দাবির কোনও সরকারি বা স্বতন্ত্র প্রমাণ নেই, বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণ ভারত–আমেরিকার প্রভাব

 

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত–আমেরিকা–চীন ত্রিপক্ষীয় প্রতিযোগিতা দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতায় কৌশলগত মধ্যবর্তী অবস্থান হওয়ায় প্রতিটি মহাশক্তির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

 

অভিযোগকারীরা মনে করছেন, চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ জোরদার করে এই অবস্থানকে কৌশলগত সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করছে—বিশেষ করে যারা ভারত–যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বলয়ের বাইরে রয়েছে।

 

অভিযোগের রাজনৈতিক প্রভাব

 

অভিযোগগুলো এখনো প্রমাণিত নয়, তবে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। নেতাদের ঘন ঘন চীন ভ্রমণ, কূটনৈতিক কার্যক্রমের বিস্তার এবং ভারত–আমেরিকা বিরোধী বলয় তৈরির অভিযোগ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে চীনের তৎপরতা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণে উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?

মতামত তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?

ফেব্রুয়ারির ৮ কিংবা ১৪ তারিখ নিয়ে গুঞ্জন, অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার প্রশ্নে বাড়ছে জাতীয় বিতর্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির ৮ কিংবা ১৪ তারিখ নিয়ে গুঞ্জন, অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার প্রশ্নে বাড়ছে জাতীয় বিতর্ক

বড় দুই দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনে ‘বিদেশ থেকে খেলা চলছে’, দাবি সজীব ওয়াজেদ জয়ের

বিবিসি বাংলায় সাক্ষাৎকার বড় দুই দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনে ‘বিদেশ থেকে খেলা চলছে’, দাবি সজীব ওয়াজেদ জয়ের

মহাবিশ্ব থেকে সুপার এলিয়েনরা ডাইরেক্ট নামিয়াছে আমাদের মাঝে

ব্যঙ্গ কলাম মহাবিশ্ব থেকে সুপার এলিয়েনরা ডাইরেক্ট নামিয়াছে আমাদের মাঝে

সূফিবাদ বনাম রাষ্ট্রীয় ধর্মনীতি

মতামত সূফিবাদ বনাম রাষ্ট্রীয় ধর্মনীতি

মুসলিম বিশ্বে ওয়াহাবি-সালাফি কারা?

বাংলাদেশে বিস্তর আলোচনা মুসলিম বিশ্বে ওয়াহাবি-সালাফি কারা?

কাগজে সেবা, বাস্তবে লুটপাট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত

মতামত কাগজে সেবা, বাস্তবে লুটপাট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত

সারাদেশে নীরব চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের আতঙ্কে থমকে গেছে অর্থনীতি

মতামত সারাদেশে নীরব চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের আতঙ্কে থমকে গেছে অর্থনীতি