বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক সমর্থনে সরকার পরিবর্তন দেশটিকে এক অজানা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বেইলআউট প্রার্থনা এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট প্রমাণ করছে কখনো উন্নয়নের মডেল বলা বাংলাদেশ আজ গভীর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা সাংবিধানিক বৈধতাহীন এবং কার্যত সেনাবাহিনীর প্রভাবাধীন। সেনাপ্রধানই এখন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে, আর এই চিত্র পাকিস্তানের হুবহু প্রতিফলন। পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও রাজনীতির চূড়ান্ত মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠেছে, যার প্রভাব দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত।
আরও উদ্বেগজনক হলো উগ্র ইসলামবাদের উত্থান। কারাগার ভেঙে জঙ্গিদের মুক্তি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রকাশ্য সমাবেশ—সবকিছুই প্রমাণ করছে বাংলাদেশ আবারও মৌলবাদের অগ্নিগর্ভে প্রবেশ করছে। হাসিনা সরকার যে জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল, তার সব অর্জন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। নির্বিচার গ্রেপ্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, আদালতে নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমন সব মিলিয়ে দেশজুড়ে ভয় ও আতঙ্কের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই বাস্তবতা দেশকে আরও বিভক্ত করছে, অর্থনীতিকে অচল করে দিচ্ছে এবং বিদেশি আস্থাকে ধ্বংস করছে।
আজ প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে হাঁটছে? যে দেশ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক নিপীড়ন থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিল, আজ সে দেশই কি আবার সামরিক কর্তৃত্ববাদ ও মৌলবাদের কবলে পড়তে চলেছে?
জাতীয় পুনর্মিলন, গণতান্ত্রিক সংলাপ ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই। অন্যথায় বাংলাদেশ সত্যিই পাকিস্তানের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে—যা কেবল রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, পুরো জাতির জন্য মারাত্মক ট্র্যাজেডি হবে।