সর্বশেষ

নাফ নদীতে জিম্মিদশা, আরাকান আর্মির হাতে শত শত ট্রলার, হাজার জেলে বন্দি নীরব রাষ্ট্রযন্ত্র

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২৪
গত কয়েক মাসে শত শত ট্রলার আটক এবং হাজার হাজার জেলে জিম্মিদশায় পড়েছে। টেকনাফ, কক্সবাজার ও উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় এখন একটাই আতঙ্ক কোনো জেলে সমুদ্রে নামলেই হয়তো ফিরতে পারবে না। মুক্তিপণ না দিলে আরাকান আর্মির হাতে তারা অসহায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা একাধিক জেলে।
নাফ নদীতে জিম্মিদশা, আরাকান আর্মির হাতে শত শত ট্রলার, হাজার জেলে বন্দি নীরব রাষ্ট্রযন্ত্র
নাফ নদীতে আরাকান আর্মির হাতে জেলে জিম্মি

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাফ নদী দিন দিন পরিণত হচ্ছে ভয়ঙ্কর অশান্ত সীমান্তে। প্রতিদিনই খবর আসছে, মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হাতে বাংলাদেশি জেলেরা আটক হচ্ছে। মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারসহ তুলে নিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি, এরপর শুরু হয় এক ভয়াবহ নাটক জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়।

 

প্রতিদিন নতুন জিম্মি, পরিবারের আর্তনাদ

গত কয়েক মাসে শত শত ট্রলার আটক এবং হাজার হাজার জেলে জিম্মিদশায় পড়েছে। টেকনাফ, কক্সবাজার ও উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় এখন একটাই আতঙ্ক কোনো জেলে সমুদ্রে নামলেই হয়তো ফিরতে পারবে না। মুক্তিপণ না দিলে আরাকান আর্মির হাতে তারা অসহায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা একাধিক জেলে।

 

এ অবস্থায় জেলেদের পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ধারদেনা করে মুক্তিপণ যোগাড় করতে হচ্ছে। অথচ, রাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না—এমন অভিযোগ দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

 

রাষ্ট্রযন্ত্রের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ

অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পরও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের নীরবতা জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে—দেশের নাগরিকদের জীবন রক্ষায় যদি রাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়, তবে তাদের নিরাপত্তা কে দেবে?

 

অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি

নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের জেলেরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি রপ্তানি থেকে দেশ প্রতিবছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। অথচ সেই জেলেদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

নাফ নদী থেকে ২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
নাফ নদীতে মাছ ধরার ৌকা

আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের নিয়ন্ত্রণ

আরাকান আর্মি কেবল একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নয়; তারা আন্তর্জাতিকভাবে অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বলে পরিচিত। এখন তারা বাংলাদেশি জেলেদের জীবন নিয়ে ‘মুক্তিপণের ব্যবসা’ শুরু করেছে। অথচ সীমান্তবর্তী বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা না নেওয়ায় এই অপরাধচক্র দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

 

বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। আন্তর্জাতিক মহলকে সম্পৃক্ত করে সীমান্তে এই অপরাধচক্র দমনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। একইসঙ্গে বিজিবি, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে শক্ত অবস্থানে এনে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

 

অন্যথায় প্রতিদিন নতুন পরিবার নিঃস্ব হবে, মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে রাষ্ট্রের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের—কারণ দেশের নাগরিককেই যদি রক্ষা করা না যায়, তবে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

সব খবর