সর্বশেষ

মতামত

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সত্যের অনুসন্ধান হোক নিরপেক্ষভাবে

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৭
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সত্যের অনুসন্ধান হোক নিরপেক্ষভাবে

বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে আবারও এক নতুন আলোচিত অধ্যায় শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া চলছে বা বিবেচনায় রয়েছে। অভিযোগগুলোর সূত্রপাত সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার নানা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত যার মধ্যে পিলখানা ট্র্যাজেডি, গুম ও হত্যার মতো সংবেদনশীল ইস্যু উল্লেখযোগ্য।

 

প্রতিবেদনগুলো আরও ইঙ্গিত করছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী কিছু ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত তথাকথিত “আয়নাঘর” নামের এক রহস্যজনক স্থাপনা যা ‘আয়নার ঘর’ হিসেবেও পরিচিত সংশ্লিষ্ট প্রমাণ নষ্টের অভিযোগও তদন্তের আওতায় এসেছে। এমনকি আরও গুরুতরভাবে বলা হচ্ছে, জেনারেল ওয়াকার বড় অপরাধীদের বিদেশে পাচার বা ‘সেইফ এক্সিট’ দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

যদিও এসব তথ্য এখনো কোনো সরকারি সূত্রে নিশ্চিত হয়নি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বা তদন্ত শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যম জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা প্রকাশ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলেননি।

 

এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে,এ প্রক্রিয়া কি সত্যিই ন্যায়বিচারের অংশ, নাকি এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নতুন অধ্যায়? বাংলাদেশের ইতিহাসে বিচারপ্রক্রিয়াকে বারবার রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের দৃষ্টান্ত আছে। তাই নাগরিক সমাজের একাংশের মধ্যে আশঙ্কা আবারও কি সেই পুরনো চক্র ফিরে আসছে?

 

ন্যায়বিচারের মূল ভিত্তি হলো স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। অভিযোগ যত গুরুতরই হোক না কেন, তা যাচাইয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রমাণ, স্বাধীন তদন্ত ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, কিন্তু একই সঙ্গে আইন যেন কাউকে রাজনৈতিকভাবে শায়েস্তা করার অস্ত্র না হয়—এটাই হতে হবে রাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান।

 

আজ সময় এসেছে প্রতিশোধ ও পক্ষপাতের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিচার কাঠামো নির্মাণের। সেনাপ্রধান হোন বা সাধারণ নাগরিক সবার জন্য একই ন্যায়বিচারের মানদণ্ড প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কেবল নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও সত্যভিত্তিক বিচারই পারে দেশে ন্যায়, আস্থা ও আইনের শাসনের প্রকৃত সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে।

সব খবর