সর্বশেষ

মব সন্ত্রাসে বাবার মৃত্যু, সংসার চালাতে ১৪ বছরের জয় নিলেন বাবার কাজ

প্রকাশিত: ৩০ অগাস্ট ২০২৫, ১৬:১৫
মব সন্ত্রাসে বাবার মৃত্যু, সংসার চালাতে ১৪ বছরের জয় নিলেন বাবার কাজ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় গণপিটুনিতে নিহত রুপলাল দাসের ছেলে জয় দাস (১৪) জুতা সেলাই করছে। ছবিঃ সংগৃহীত

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় মব সন্ত্রাসে নিহত রূপলাল রবিদাসের ১৪ বছরের ছেলে জয় রবিদাস বর্তমানে তার পিতার পেশায় ফিরে এসেছেন। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার, কিন্তু বাবার অকাল মৃত্যুতে বাধ্য হয়ে সেই স্বপ্ন আপাতত থেমে গেছে। এখন তিনি প্রতিদিন ফুটপাতে বসে জুতা সেলাই করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন।

 

গত ৯ আগস্ট রাতে, রূপলাল রবিদাস ও তার ভাগ্নি প্রদীপ লাল রবিদাস ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন। সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলায় তাদের আটক করে মব চোর সন্দেহে। কিছু সময়ের মধ্যে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রূপলালের স্ত্রী মালতি রানী রবিদাসের করা মামলার পর পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে, জয় রবিদাসের জীবন এখনও থমকে গেছে।

 

জয়, যিনি তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন, তার শিক্ষাজীবন একেবারে ভেঙে গেছে। "বাবার কাজই এখন আমার পেশা। মা, ঠাকুরমা, ও দুই বোনকে নিয়ে সংসার চালানোর দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। বাবার মৃত্যুতে যে স্বপ্ন ছিল, তা থেমে গেছে," বলেন জয়, চোখ ভেজা কণ্ঠে।

 

জয়ের মা মালতি রানী রবিদাস জানান, "সংসারে আর কোনো পুরুষ নেই, জয়ই এখন একমাত্র ভরসা। তাকে স্কুলে পাঠাতে না পারাটা আমার জন্য বড় বেদনা। কিছু মানুষ আমাদের সুখ চিরদিনের জন্য কেড়ে নিয়েছে।"

 

রূপলালের বড় মেয়ে নুপুর রবিদাস বলেন, "বাবা থাকলে ছোট ভাইকে এই কাজ করতে হতো না। তার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে বড় কিছু হবে, কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সব কিছু বদলে গেছে।"

 

এদিকে, তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, "জয়ের স্কুলে যেতে পারার যে স্বপ্ন ছিল, তা এখন বাস্তব নয়। তার বাবার হত্যার পর তাকে পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, যা সমাজের জন্য এক বড় শিক্ষা।"

 

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু হানিফ বলেন, "রূপলাল সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। তার ছেলে এখন তার জায়গায় বসে কাজ করছে—এটা শুধু এক পরিবারকেই নয়, পুরো সমাজকেই বিচলিত করে।"

 

এই ঘটনা শুধু রূপলাল রবিদাসের পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য এক বড় শোকের মুহূর্ত। মব সন্ত্রাসের কারণে একটি পরিবারের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে, এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন উঠে এসেছে।

সব খবর