রংপুর নগরীর হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে গেছে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ‘বৈষম্য বিরোধী নেতা’ ইমতিয়াজ আহমদ ইমতি বেত দিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ৪ সেপ্টেম্বর। অভিযোগ অনুযায়ী, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতি ইমতিয়াজ মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে আসেন। এরপর অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির তিনটি কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের নাম ধরে ডেকে বেত দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এতে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়, যাদের মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন আক্তারকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন ভর্তি রাখা হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “ইমতিয়াজ সবার সামনে ছেলে-মেয়ে আলাদা না করে যাকে ফেল করেছে তাকে পেটান। এমনকি নবম শ্রেণির এক ক্লাসে বেত ভেঙে ফেলেন।” ভয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “উনি সভাপতি ও বড় নেতা, চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে কিছু বলতে পারিনি।”
এ ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলেও ইমতিয়াজ দাবি করেন, তিনি শিক্ষার্থীদের ‘ভালো ফলাফলের জন্য শাসন’ করেছেন। তার ভাষায়, “এতে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনও অভিযোগ নেই। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে এবং পরে মীমাংসা হয়ে গেছে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানও ঘটনাকে ছোট করে দেখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “উনি এসে শিক্ষার্থীদের ভালো পড়াশোনার কথা বলেছেন, বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।” তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির সুযোগ নেই এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও ইমতিয়াজ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অস্থায়ী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি নিয়মকানুন উপেক্ষা করে পদটি দখল করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটা শাসন নয়, শিক্ষার্থী নির্যাতন। এটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রধান শিক্ষকের উচিত ছিল বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো। কিন্তু তিনি ধামাচাপা দিয়েছেন।”
এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।