কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের হাতে সোমবার থেকে বৈধ মোবাইল ফোন সিম কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিনে ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং (ইউসিআর)-এর নির্বাচিত সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির সদস্যদের হাতে সিম কার্ড দেওয়া হয়।
আরআরআরসি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার সিম বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে। কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত অবৈধ সিম দ্রুত ব্লক করে দেওয়া হবে। কেবল বৈধ সিম ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং অপরাধ কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে।”
দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সিম অবৈধভাবে ব্যবহার করে আসছিলেন। নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় সরকার চলতি বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে সিম ব্যবহারের অনুমতি দেয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও চারটি মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু হলো।
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) প্রদত্ত নিবন্ধন নম্বর বা ‘প্রোগ্রেস আইডি’র ভিত্তিতে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের সিম প্রদান করা হচ্ছে। মোবাইল অপারেটররা এ জন্য পৃথক নম্বর সিরিজ নির্ধারণ করেছে। ইউএনএইচসিআরের ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডেটা সেন্টারে, পরে তা সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হবে।
এই উদ্যোগকে অনেকেই নিরাপত্তা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক মনে করছেন। তবে অদূর ভবিষ্যতে এর রাজনৈতিক প্রভাবও আলোচনায় আসছে। রোহিঙ্গাদের বৈধ সিম ব্যবহারের সুযোগ তাদের যোগাযোগ ও সংগঠিত হওয়ার ক্ষমতা বাড়াবে। এতে ক্যাম্পভিত্তিক নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী হতে পারে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এ উদ্যোগকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা ইস্যু সবসময়ই সংবেদনশীল। বৈধ সিম ব্যবহারের ফলে রোহিঙ্গাদের তথ্যপ্রবাহ বাড়বে, যা স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্য নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হতে পারে।
রোহিঙ্গাদের হাতে বৈধ সিম কার্ড তুলে দেওয়ার উদ্যোগ মানবিক ও নিরাপত্তা উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর প্রভাব শুধু ক্যাম্পেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং স্থানীয় রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচনে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। সরকার বলছে, বৈধ সিম ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা উন্নত হবে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ উদ্যোগ নির্বাচনী মাঠে নতুন বিতর্কও তৈরি করতে পারে। সেইসাথে তৈরী হতে পারে অস্থিতিশীলতা, সহিংসতার শঙ্কা।