সর্বশেষ

রাজশাহীতে পুলিশের উপস্থিতিতে খানকা শরীফে হামলা ভাঙচুর তৌহিদি জনতার

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫
“পুলিশ, ডিবি, ওসি—সবাই উপস্থিত থেকেও কিছু করেনি। তাহলে অভিযোগ করব কার কাছে? আমি মানবধর্ম করি, সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন।”
রাজশাহীতে পুলিশের উপস্থিতিতে খানকা শরীফে হামলা ভাঙচুর তৌহিদি জনতার

রাজশাহীর পবা উপজেলায় শতাধিক মুসল্লির হামলায় ভাঙচুরের শিকার হয়েছে একটি খানকা শরিফ। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর দেড় শতাধিক মুসল্লি মসজিদ থেকে বেরিয়ে ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজ ভান্ডারী গাউছিয়া পাক দরবার শরিফ’ নামের খানকাটিতে হামলা চালায়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান ভান্ডারী প্রায় ১৫ বছর আগে নিজের বাড়ির পাশে এই খানকা শরিফ গড়ে তোলেন। ভক্তদের কাছে তিনি ‘পীর’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছরের মতো এবারও এখানে তিন দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ওই আয়োজনে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ভান্ডারী ও মুর্শিদী গান পরিবেশন হচ্ছিল, যেখানে নারী শিল্পীরাও অংশ নিচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আগেই এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়।

 

হামলার সময় পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা টিনঘেরা খানকাটিতে লাঠি-সোঁটা দিয়ে মুহুর্মুহু আঘাত করে। হামলার শব্দ দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও ভাঙচুর ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

 

খানকার পীর আজিজুর রহমান ভান্ডারী সাংবাদিকদের বলেন, 

 

“গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় কিছু লোক অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতেও তারা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা সমবেত হয়ে হামলা চালায়। আমি বাড়ির ভেতরে ছিলাম, ভক্তরা বের হতে দেয়নি। হামলাকারীরা আমার বাড়ির দিকেও ইট-পাটকেল ছুড়েছে।”

 

তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপির সাবেক সদস্য গোলাম মোস্তফা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও ছিলেন। হামলাকারীরা মাইকে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে দিতে খানকায় প্রবেশ করে।

 

তবে অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, 

 

“আমি গত রাতে থানায় গিয়েছিলাম, কিন্তু হামলার সময় উপস্থিত ছিলাম না। পরে এসে শুনেছি ঘটনা ঘটেছে।” 

 

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী হোসেনও জানান, এ ঘটনায় তাঁর দলের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর পবা উপজেলা আমির আযম আলী বলেন, 

 

“আমাদের দলের কারও এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।”

 

এ বিষয়ে ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, 

 

“মানুষ এত বেশি ছিল, অল্প কয়েকজন পুলিশ দিয়ে তাদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি। আমরা একটু দূরে অবস্থান করছিলাম। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

তবে অভিযোগ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন আজিজুর রহমান ভান্ডারী। তাঁর ভাষায়, 

 

“পুলিশ, ডিবি, ওসি—সবাই উপস্থিত থেকেও কিছু করেনি। তাহলে অভিযোগ করব কার কাছে? আমি মানবধর্ম করি, সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন।”

 

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার গাজিউর বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ ঘটনায় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেবল সহিংসতাকে উৎসাহিত করছে।

সব খবর