রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিকভাবে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। বুধবার সারাদিন ও রাতে সংঘটিত এসব ঘটনায় জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে মাঠে নেমেছে।
রামপুরায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন, থেমে থেমে বিস্ফোরণ
বুধবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনের বিপরীতে ইউলুপের নিচে পার্কিং করা ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন লাগার পর বাসের ভেতর থেকে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান জানান, আগুন লাগার পরপরই দল পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল বলেন, বাসটিতে আগুন লাগানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এ কাজ করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শেরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে আগুন
বুধবার ভোররাতে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গ্রামীণ ব্যাংকের হাতিবান্ধা শাখা অফিসের গেটের সামনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার ভিডিও পরে ছাত্রলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায় দুর্বৃত্তরা ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিচ্ছে এবং ব্যাংকের সাইনবোর্ডে আগুন জ্বলছে।

ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল আমিন নিশ্চিত করেন, আগুন দিয়ে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে শাখা অফিসের কোনো সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তিনি বলেন, “ভিডিও বিশ্লেষণসহ সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দায়ীদের শনাক্তে পুলিশ মাঠে আছে।”
পল্লবীতে ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশ সদস্য আহত
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর পল্লবী থানার সামনে ও সাগুফতা গেট এলাকায় পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ফ্লাইওভারের ওপর থেকে দুর্বৃত্তরা ককটেল ছুড়েই মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়িত্বে থাকা এএসআই মো. নুর ইসলাম আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে আতঙ্ক তৈরি করতে এ হামলা চালিয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
নগরবাসীর উদ্বেগ, পুলিশের সতর্কতা
দু সপ্তাহ ধরে রাজধানী থেকে জেলা শহর পর্যন্ত এমন ধারাবাহিক নাশকতার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। রাতের পর রাত ফাঁকা রাস্তায় বিস্ফোরণের শব্দে অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করছেন।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার তথ্য থাকলে ৯৯৯-এ জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।