ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ হোসেন কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়ার খবর প্রকাশের পর আবারও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে তার স্বজনদের দাবি, এই মৃত্যু রহস্যজনক এবং এতে চিকিৎসা অবহেলার ইঙ্গিত রয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার আগে তারা জানতেন না যে মুরাদের অবস্থা এতটা সংকটজনক। তাদের অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও যথাসময়ে তাকে বিশেষায়িত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার–১ এর জেল সুপার মামুন জানান, বন্দী মুরাদ হোসেন কিডনি রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। সকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং পরে গাজীপুর তাজউদ্দীন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের চাকার যান্ত্রিক সমস্যায় দেরি হয়। পরে ঢামেকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বুধবার (২০ নভেম্বর) ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তবে এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কাশিমপুর কারাগারের ‘সন্দেহজনক মৃত্যুর ধারাবাহিকতা’ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৬ মাসে (আগস্ট ২০২৪–ডিসেম্বর ২০২৫) আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট ৪৫ জন নেতার মৃত্যু হয়েছে কারাবন্দী অবস্থায়। মুরাদ হোসেন সেই তালিকার সর্বশেষ নাম। প্রতিটি ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বা ‘স্ট্রোক’ উল্লেখ করা হয়েছে, যা সমালোচনা বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা উদ্বেগজনক। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ, চিকিৎসা অবহেলা অথবা ধীরে কার্যকর বিষক্রিয়ায় (Slow Poisoning) হৃদযন্ত্র বিকল হতে পারে। তবে এগুলো নিশ্চিত করতে টক্সিকোলজি পরীক্ষার প্রয়োজন, যা গত কয়েকটি আলোচিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, বন্দীদের চিকিৎসা না দিয়ে তাদের “মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া” হচ্ছে। তারা এই ঘটনাকে “পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড” হিসেবে দাবি করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি চিকিৎসায় দেরি হওয়া, ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নষ্ট করা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রকাশে অস্বচ্ছতা মিলিয়ে কারা ব্যবস্থার প্রতি জনবিশ্বাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মুরাদ হোসেনের মৃত্যু কারাগারে মৃত্যুর রহস্যঘেরা চক্র ভাঙতে কি তদন্তের নতুন দরজা খুলবে, নাকি এটি হবে সেই দীর্ঘ তালিকার আরেকটি সংযোজন—এখনো সেই প্রশ্নের উত্তর অনিশ্চিত।