কর্তৃত্ববাদ পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘এবার আমাদের পালা’ সংস্কৃতির উত্থান নতুন বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এই অভিমত জানায়। সংস্থাটি আরো জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মামলা ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্নকে বিপন্ন করছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের বহুমুখী ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিচ্ছবি এখন ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলোর নেতা–কর্মীদের একাংশের আচরণে প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আবারও স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে পতিত রাজনৈতিক শক্তিও এতে যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, ধর্মভিত্তিক দল ও অতিক্ষমতায়িত গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় তথাকথিত ‘মবতন্ত্রের’ মুখোশে সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। দলগুলোর অভ্যন্তরীণ জবাবদিহির অভাব, স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
টিআইবি জানায়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা দখল, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত হচ্ছেন। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করছে। পরিবহন টার্মিনাল, বাজার, জলমহাল ও খনিজ সম্পদের ওপর দখলদারি পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
সংস্থাটি আরও অভিযোগ করে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও দুর্নীতিমুক্ত সংস্কৃতির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদের একাংশ অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যমান দুর্বৃত্তায়িত চর্চাই রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহি ও নৈতিকতার ভিত্তিতে নিজেদের সংস্কার না করে, তাহলে জনগণের হতাশা বাড়বে এবং নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। এখনই আত্মজিজ্ঞাসা ও পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।