রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কুমিল্লা শহরজুড়ে চলছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির আধিপত্য। ভবন নির্মাণ, অটোরিকশা চলাচল এবং ফুটপাথের দোকান, সবখানেই চলছে পরিকল্পিত চাঁদা আদায়।
নতুন ভবন নির্মাণ করতে হলে নির্দিষ্ট দোকান থেকে নির্মাণসামগ্রী কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ইট, বালু, সিমেন্ট, থাই গ্লাস, রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, টাইলস মিস্ত্রি সবকিছু সরবরাহ করছে সিন্ডিকেট। ইপিজেড, কুমিল্লা মেডিকেল, রেসকোর্স, মুন্সেফ বাড়ি, তেলিকোনা, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব সিন্ডিকেট সক্রিয়। সৌদি প্রবাসী ইকরাম জানান, তাকে বাধ্য করা হয়েছে নির্ধারিত দোকান থেকে অতিরিক্ত দামে সিমেন্ট কিনতে এবং তাদের মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করাতে। খরচ হয়েছে ৫০ লাখ টাকার বেশি।
রাকিব হোসেন জানান, তার ভাই দেশের বাইরে থাকায় রেসকোর্স এলাকায় বাড়ির কাজ শুরু করলে কিছু যুবক কাজ বন্ধ করে দেয় এবং নির্ধারিত দোকান থেকে নির্মাণসামগ্রী কিনতে বাধ্য করে। স্থানীয় নেতাদের জানালেও কোনো সমাধান হয়নি।
মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ জানালেও তিনি বলেন, “পণ্য তো লাগবেই, ওদের কাছ থেকেই নিতে হবে।”
অটোরিকশা চালকদের ক্ষেত্রেও চাঁদাবাজির চিত্র বদলেছে। আগে চার স্থানে চাঁদা দিতে হতো, এখন শুধু শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে ১০ টাকা করে দিতে হয়। তবে টমছম ব্রিজে সিএনজি চালকদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে আলম নামে একজন। শাসনগাছা নিয়ন্ত্রণ করছে রেজাউল কাইয়ুম।
ফুটপাথের দোকানদাররাও রেহাই পাচ্ছেন না। টমছম ব্রিজ ও কান্দিরপাড় এলাকায় প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। দোকানদাররা জানান, রাজিব খান নামে একজন এসব নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ছিনতাই চক্রেরও মূলহোতা। প্রশাসনের কিছু সদস্যও এতে জড়িত বলে অভিযোগ।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপি সভাপতি উদবাতুল বারী আবু বলেন, “যারা এসব করছে তারা নেশাখোর, টোকাই। বিএনপির কেউ জড়িত নয়। অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চাঁদাবাজির এই নতুন রূপে সাধারণ মানুষ, প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়।