ময়মনসিংহ জংশন রেলওয়ে স্টেশনের ওয়াশপিটে দাঁড়ানো জারিয়া লোকাল ট্রেনের একটি বগিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। বুধবার ভোরে ঘটেছে এই ঘটনা। দ্রুত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি ও জীবনহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। অভিযানে অংশ নেওয়া আনসার সদস্যদের ধাওয়ায় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় রেল সুপার আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, “রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎক্ষণাৎ ও সাহসী পদক্ষেপে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে এবং স্টেশনের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল।” তিনি জানান, আগুন লাগার সময় বগির কয়েকটি সিটের অংশ পুড়ে গেছে; তবে বগিটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
সিআরপি থানার ওসি আখতার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ওয়াশপিটটি ছিল ট্রেনের কোচগুলো ধোঁয়া-মোছা করার জন্য দাঁড় করানো অংশ; সেখানে রাত্রে অন্ধকার থাকার সুযোগে দুর্বৃত্তরা উপদ্রব সৃষ্টি করেছে। ওসি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দুর্বৃত্তরা গানপাউডার জাতীয় মিশ্রণ ও পেট্রোল ব্যবহার করে বগিতে আগুন দিয়েছে। রান্নার গ্যাস বা অতিরিক্ত উত্তেজক ব্যবহারের কোনো প্রমাণ মেলেনি, তবে পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন।”
ওসি আরও জানান, আগুন লাগার সময় থাকা আনসার সদস্যরা সন্দেহজনক কিছু দেখে ধাওয়া করলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে রেলওয়ে ও আনসার সদস্যরা মিলিতভাবে আগুন নিভিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলেছে যে স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ ও স্টেশনের আশপাশের লোকজনের বয়ান সংগ্রহ করে ঘটনার গোড়াপত্তন করার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত করণীয় নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এক স্টেশনীয় যাত্রী বলেন, “ভোরে এমন ঘটনার কথা শুনে আতঙ্ক লাগে। স্টেশনে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত।” রেলকর্মীরাও বলেছেন, ওয়াশপিট পরিবেষ্টিত অংশটি রাতে বদ্ধ রাখা ও নজরদারি বাড়ানো হলে এ ধরনের চেষ্টা রোধ করা সম্ভব ছিল।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হচ্ছে; পর্যাপ্ত রাউন্ডিং, গ্রিডেড চেক ও অতিরিক্ত পাহারা রাখা হবে। পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ দল ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট প্রয়োজনীয় তদন্ত চালাবে। ওসি আখতার হোসেন বলেন, “নাশকতা চেষ্টা যারা করেছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ঘটনার ফলে ট্রেন চলাচলে তেমন বিরতি না থাকলেও যাত্রীরা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে সুপার ও পুলিশ উভয়ই জনগণকে অনুরোধ করেছেন কোনো সন্দেহজনক সামগ্রী বা ব্যক্তিকে সরাসরি স্থানীয় নিরাপত্তা সূত্রে জানাতে। তদন্তকালে জেলা প্রশাসন, রেল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয় রেখেছে এবং যেকোনো উন্নত তথ্য পাওয়া গেলে তা দ্রুত প্রকাশ করা হবে।