সর্বশেষ

অস্ত্র উঁচিয়ে হিন্দুদের হত্যা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৩
অস্ত্র উঁচিয়ে হিন্দুদের হত্যা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্বেগ

গাজীপুরের টঙ্গির টিএনটি বিটিসিএল কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ মিয়াজিকে পঞ্চগড়ের হ্যালিপ্যাড বাজার এলাকায় গাছের সাথে হাত-পা বাঁধা ও বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি সংগঠিত সাম্প্রদায়িক মহল ঘটনাটিকে ইস্যু করে আন্তর্জাতিক হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জিগির তুলছে এবং একই সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘু—বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হত্যার হুমকি, মন্দির ও বিগ্রহ ভাঙার উস্কানি এবং ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব ঘটনায় দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

 

ধর্মীয় বৈষম্যবিরোধী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা’ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য—বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করা, নির্বাচনের আগ-পিছনে অস্থিরতা তৈরি করা এবং সামাজিক সহাবস্থানের ভিত্তি নষ্ট করা।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িক অশুভ গোষ্ঠী বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র উঁচিয়ে হিন্দুদের খুনের হুমকি দিচ্ছে; কোথাও মন্দিরের ওপর হামলা, কোথাও বিগ্রহ ভাঙচুর কিংবা ধর্মীয় গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও একইসঙ্গে পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যার লক্ষ্য ধর্মীয় বিদ্বেষ উস্কে দেওয়া।

 

 

সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার অভিযোগ—এতসব ঘটনা সরকারের নাকের ডগায় ঘটলেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নীরব। অনেক ক্ষেত্রে ঘটনাগুলো অস্বীকার করা হচ্ছে বা গুরুত্ব না দিয়ে গুজব হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের ভাষ্য অনুযায়ী, অতীতের তুলনায় বর্তমান সাম্প্রদায়িক তৎপরতা আরও সুসংগঠিত, পরিকল্পিত এবং ভয়াবহ।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও এ মুহূর্তে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। এতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়ছে। ঐক্যমোর্চার অভিযোগ, “একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করতে ধর্মীয় বিদ্বেষকে হাতিয়ার বানিয়েছে, আর প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই তা দেখেও না দেখার ভান করছে।”

 

সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা সরকারের প্রতি তিনটি জরুরি দাবি জানিয়েছে:

  • সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সারাদেশে চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাস বন্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
  • হিন্দুদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার, সামাজিকমাধ্যমভিত্তিক ভুল তথ্য ও হত্যার হুমকি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
  • আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসকনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও ঘৃণার প্রচারণার আইনি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

সংগঠনটি দেশের সব গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মানুষকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদেরও এগিয়ে এসে ভয়-উদ্বেগে থাকা নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান করা হয়েছে।

 

ঐক্যমোর্চার মতে, বাংলাদেশ বহু ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের দেশ। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুধু সংখ্যালঘুদের নয়, গোটা দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

 

সংগঠন মনে করে, বারবার হামলা বা প্রচারণা যদি অরক্ষিত থাকে, তাহলে দেশব্যাপী ভয়, অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক বৈরিতা আরও বৃদ্ধি পাবে—যা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।

 

সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা মনে করিয়ে দিয়েছে—সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তাই সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ শুধু ধর্মীয় সহিংসতা নয়, তা সাংবিধানিক লঙ্ঘনও। সংগঠনটির দাবি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেবল বিবৃতি নয়, স্পষ্ট ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে, এবং যেন আর কেউ গুজব-উস্কানি ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

সব খবর