যৌতুকের মামলায় কারাবাস করা এক সরকারি কর্মকর্তাকে নির্বাচনের আগে বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বিষয়টি প্রশাসনের ভেতরে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। কারণ জেলা প্রশাসককে জেলার আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় যেখানে সুনাম, মর্যাদা ও ব্যক্তিগত সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সদ্য বরিশালের ডিসি হয়েছেন খায়রুল আলম সুমন, ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা ছিল এবং সে মামলায় তিনি কারাবাসও করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এসব আমার ব্যক্তিগত তথ্য। আমার নামে বিভাগীয় মামলা ছিল, কর্তৃপক্ষ সব জানে এবং জেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” বর্তমানে তার ব্যক্তিগত ডাটা শিটে তিনি নিজেকে ‘অবিবাহিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সূত্র জানায়, খায়রুল আলম সুমন সাবেক সচিব আবদুল মান্নানের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। চাকরিজীবনের শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবেশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আবদুল মান্নান ছিলেন ডিসি। পরে তার মেয়ের সঙ্গে খায়রুলের বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম ডিসি অফিসে কাজ করেন এবং নাঙ্গলকোট, নিকলি ও বাজিতপুরে এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ইউএনও ছিলেন।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে এসিল্যান্ড থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে আদালত তাকে ও তার মা খোদেজা বেগমকে কারাগারে পাঠান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই শাহ আলম তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন। তবে আদালত রিমান্ড ও জামিন উভয় আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দীর্ঘ সময় তিনি কারাগারে ছিলেন।
স্ত্রী মামলায় অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের জুনে বিয়ের পর থেকেই খায়রুল ও তার পরিবার যৌতুক দাবি করতেন। তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। ২০১৬ সালের মার্চে ওয়ারী এলাকায় খায়রুলের বাসায় তার মা গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দেন এবং খায়রুল তার স্ত্রীর হাত চেপে ধরেন। পরদিন স্ত্রী ওয়ারী থানায় মামলা করেন। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ দেন, যার ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলা হয়।
যৌতুক মামলার কারণে তার নিয়মিত পদোন্নতি হয়নি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেখানো হলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে উপসচিব পদে আনুষ্ঠানিক পদোন্নতি দেওয়া হয়। নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি গ্রহণ করেছিলেন।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা না থাকা কোনো কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক করা প্রশাসনের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। জেলা প্রশাসককে জেলার আইনশৃঙ্খলা ও ম্যাজিস্ট্রেসি পরিচালনা করতে হয়। তার বিরুদ্ধে অতীতের অভিযোগ থাকায় জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।