সর্বশেষ

শোকস্তব্ধ গোয়ালন্দ

নিহত রাসেল মোল্লার গ্রামে আহাজারি

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৬
“সরকার যদি মাজার ভাঙার বিচার আগে করতো, তাহলে আজ আমি আমার স্বামীকে হারাতাম না।”
নিহত রাসেল মোল্লার গ্রামে আহাজারি

রাসেলের পাঁচ বছরের কন্যা ইয়াসমিন দাদুর কোলে বসে খাটিয়া দেখিয়ে বলে, “দাদু, এটা দিয়ে কী করে?” পাশ থেকে একজন বলেন, “এখানে তোমার আব্বুকে শোয়ানো হবে।” ইয়াসমিন তখন বলে, “তাহলে ঘর থেকে বালিশ এনে দাও, আব্বু এখানে শুবে।”

 

নিহত রাসেল দেবগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা, দুই সন্তানের জনক ও পেশায় গাড়িচালক। সহিংসতার সময় আহত হন তার ছোট ভাই সাজ্জাদ মোল্লা (১৭)। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর ঘিরে শুক্রবার ছড়ানো ভয়াবহ সহিংসতায় প্রান হারায় রাসেল মোল্লা (২৮)।  আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী। জুমার নামাজের পর শত শত মানুষ দরবার শরীফে হামলা চালায়, কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলন করে প্রকাশ্যে দাহ করে।

রাসেলকে আহত অবস্থায় গোয়ালন্দ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও হামলা হয়। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রাসেলের স্ত্রী হাসি আক্তার বলেন, “সরকার যদি মাজার ভাঙার বিচার আগে করতো, তাহলে আজ আমি আমার স্বামীকে হারাতাম না।”

 

স্থানীয়রা জানান, রাসেল ছিলেন শান্তশিষ্ট ও নির্ঝঞ্জাট ব্যক্তি। ছোটবেলা থেকেই দরবারের ভক্ত ছিলেন। তার বাবা আজাদ মোল্লা বলেন, “আমার ছেলে কারও ক্ষতি করেনি। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে, পরে হাসপাতালে আবার কুপিয়ে হত্যা করে।”

 

শুক্রবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা চলে দরবারে। হামলাকারীরা শরিয়ত পরিপন্থি দাফনের অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। পুলিশ হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে মামলা করেছে, যাতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

 

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তবে দরবার এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

সব খবর