দেশজুড়ে বাস–পিকআপে অগ্নিসংযোগ, স্মৃতিস্তম্ভে আগুন, এবং রাজধানী ও আশপাশে নিরাপত্তা জোরদারের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিক অস্থিতিশীলতা ও নাশকতার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত দুই দিনে আশুলিয়া, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ এবং রাজধানী ঢাকায় একের পর এক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার তদন্ত চলছে, তবে এখন পর্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরিচয় স্পষ্ট হয়নি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে, আর বিজিবি মোতায়েন বিশেষ সতর্কতার অংশ।
ঢাকার আশুলিয়ায় শুক্রবার ভোরে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানে মোটরসাইকেলে আসা দুজন ব্যক্তি পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সায়েম মাসুম জানান, স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মাত্র দুই দিন আগে একই এলাকায় ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যেখানে বাস থেকে নামতে গিয়ে চালক আহত হন।

এসব ঘটনার পরদিনই পটুয়াখালীর ঝাউতলায় ‘৩৬ জুলাই’ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়রা সকালে এসে কালো দাগ দেখে হতবাক হন। জুলাই যোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন জানান, শহীদদের প্রতি অবমাননার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে। প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দায়ীদের শনাক্ত করা হবে।
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে থেমে থাকা আরেকটি বাসে আগুন দিয়ে দগ্ধ করা হয়েছে চালককে। বাসের ভেতরেই ঘুমিয়ে থাকা চালক তাবেজ খানকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পুলিশ বলছে, দুষ্কৃতিকারীরা রাতের অন্ধকারে বাসটিতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় এবং ঘটনাটি তদন্তাধীন।

অগ্নিসংযোগের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায়, যেখানে বৃহস্পতিবার রাতে কিরণমালা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছে কলেজছাত্র আব্দুল্লাহ আল সাইয়াফ। তার বন্ধু সানি যিনি এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র, ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। তাদের কাছ থেকে কেরোসিনের বোতল ও লাইটার উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা একা কাজ করেছে নাকি কেউ ইন্ধন দিয়েছে সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
অগ্নিসংযোগের ধারাবাহিকতা বাড়তে থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং নাশকতা প্রতিরোধে বিজিবি বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে।
সার্বিকভাবে, পিকআপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সমন্বিতভাবে আগুন লাগানোর ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে সংঘটিত সহিংস নাশকতার এক সম্প্রসারিত ধারা; যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে জননিরাপত্তা আরও সংকটের মুখে পড়তে পারে।