রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং গাজীপুরে একের পর এক বাসে আগুন ও ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সারাদেশে অস্থিরতা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অন্তত তিন স্থানে বাসে আগুন এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৫টিরও বেশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে কোথাও প্রাণহানি না হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জে পার্ক করা যাত্রীবাহী মিনিবাসে আগুন
শনিবার ভোর ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল মোড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসের সামনে পার্ক করা নাফ পরিবহনের একটি মিনিবাসে আগুন লাগে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস দ্রুত এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাসে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জানায়, বাসটি শুক্রবার রাতে চালক পার্ক করে রেখে যান। নৈশপ্রহরী জানিয়েছেন, তিনি কিছুক্ষণ আড়ালে গেলে ফিরে এসে আগুন দেখতে পান। আগুন যান্ত্রিক ত্রুটিতে নাকি নাশকতায় তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্ত চলছে।
গাজীপুরে চলন্ত বাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
একই দিনে রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার হারিকেন এলাকায় চলন্ত বাসে হঠাৎ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নেভালেও বাসটির প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইঞ্জিন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাসে থাকা প্রায় ১০ জন যাত্রী দ্রুত নেমে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ঘটনার পর চালক ও হেলপারকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক ত্রুটিকে কারণ হিসেবে দেখছে।
রাজধানীতে দিনে-রাতে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ
ঢাকার মিরপুর, পল্লবী, হাতিরঝিল, মৌচাক, আগারগাঁও ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

মিরপুর–পল্লবী
বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত পর্যন্ত মিরপুর বিআরটিএ এলাকায়, মেট্রো স্টেশনের নিচে এবং পল্লবীর সাগুপ্তা মোড়ে চার দফা বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ জানায়, এগুলো ককটেল নয়, স্কচটেপে মোড়ানো পটকা। দুষ্কৃতকারী দল আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যেই এগুলো ফাটিয়েছে।
হাতিরঝিল
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মধুবাগ ব্রিজের নিচে ককটেল বিস্ফোরণে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে যায়। কেউ আহত হয়নি।
মৌচাক
সাড়ে ৪টার দিকে মৌচাক ক্রসিংয়ে উড়ালসড়ক থেকে দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।
বিমানবন্দর রেলস্টেশন
রাত ১০টার পর এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজনকে শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।

আগারগাঁও
এডিবি ভবনের সামনে রাত ৯টার পর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
পুলিশ বলছে, প্রতিটি ঘটনার জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। একাধিক ঘটনায় নাশকতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথাও কোথাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, “এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। দায়ীদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।”
একদিনে রাজধানীসহ তিন জেলায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড জনমনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে এমন ধারাবাহিক ঘটনার পেছনে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তদন্তের আগে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না, তবে সবকিছু নজরদারিতে রয়েছে।