সর্বশেষ

বাড়ছে আত্মহত্যা ও সহিংসতা

রাজশাহীতে যাচাই ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে আড়াই হাজার সমিতি এবং এনজিও

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৫২
রাজশাহীতে যাচাই ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে আড়াই হাজার সমিতি এবং এনজিও

রাজশাহীর দুর্গাপুরের শ্যামপুর গ্রামের শরিফ উদ্দীন রেন্টু ১৮টি এনজিও থেকে দৈনিক কিস্তিতে ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর মতো হাজারো মানুষ এখন ঋণের ফাঁদে পড়ে মানসিক বিপর্যয় ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এনজিও, সমবায় সমিতি ও সুদ কারবারিদের অনিয়ন্ত্রিত ঋণ কার্যক্রম রাজশাহীতে ভয়াবহ সামাজিক সংকট তৈরি করেছে।

 

রেন্টুর ছেলে ইমরান জানান, তাঁর বাবা এক এনজিওর ঋণ শোধ করতে আরেকটি থেকে ঋণ নিতেন। প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হতো। পরে সুদে আরও ঋণ নিয়ে জমি বিক্রি করে দেন। এখন ইমরানের নিজের নামেও ঋণ রয়েছে। রেন্টুর স্ত্রী জানান, ১৮টি এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ১৬টি ঋণ মাফ করেছে, কিন্তু দুটি এখনও কিস্তি আদায়ে চাপ দিচ্ছে।

 

রাজশাহী জেলায় ২৪৫৩টি এনজিও, সমবায় ও সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৮১টি এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ১,১১৩টি সংস্থা এবং সমবায় অধিদপ্তরের ১,২৫৯টি সমিতির মধ্যে শত শত প্রতিষ্ঠান সরাসরি ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তিকে একাধিক এনজিও যাচাই ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে, এবং ঋণের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না।

 

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) ঢাকা থেকে অনুমোদন দিলেও রাজশাহীতে তাদের কোনো কার্যালয় নেই। ফলে তদারকির অভাবে অনিয়ম বাড়ছে। জেলা সমাজসেবা ও সমবায় কর্মকর্তারা দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন, বলছেন তাদের অনুমোদন থাকলেও ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে তারা জড়িত নন।

 

২০১৬ সাল থেকে পবা, মোহনপুর ও দুর্গাপুরে ঋণের চাপে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। কেউ স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন, কেউ সুদ না শোধ করতে পারায় খুন হয়েছেন। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, পরিবার ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

 

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “ঋণ দিতে হবে উৎপাদনমুখী খাতে। কিন্তু দরিদ্ররা চিকিৎসা, লেখাপড়া, খাবারের জন্য ঋণ নিচ্ছে, যা পরিশোধ করতে না পেরে সামাজিকভাবে অপদস্থ হচ্ছে।” মানবাধিকারকর্মী ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী জানান, এনজিওগুলো ১২% সুদের কথা বললেও বাস্তবে তা ৩০% পর্যন্ত পৌঁছায়। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আনওয়ারুল হাসান সুফী বলেন, “ঋণের চাপে মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে, আত্মহত্যা করছে।”

 

এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এখন আর কিস্তির জন্য চাপ দেয় না, তবে গ্রহীতারা তথ্য গোপন করে একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নেয়। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করে তালিকা তৈরি হচ্ছে এবং কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

 

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে কঠোর তদারকি, তথ্যভিত্তিক যাচাই এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

শেরপুরে জারি গানের আসর ঘিরে সংঘর্ষ, অবরুদ্ধ গ্রামে আতঙ্ক

তৌহিদী জনতা ও স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত শেরপুরে জারি গানের আসর ঘিরে সংঘর্ষ, অবরুদ্ধ গ্রামে আতঙ্ক

পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ এখনো অদৃশ্য শক্তির হাতে

সরকার বদলায়, বিশৃঙ্খলা নয় পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ এখনো অদৃশ্য শক্তির হাতে

অবৈধ বালু উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ঝুঁকিতে

ময়মনসিংহে বিজিবির সংবাদ সম্মেলন অবৈধ বালু উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ঝুঁকিতে

আলোর উৎসবে ব্যস্ত রংপুরের কুমারপাড়া

দীপাবলি ও কালীপূজো একসঙ্গে আলোর উৎসবে ব্যস্ত রংপুরের কুমারপাড়া

আইপিডির প্রতিবেদন বলছে, ছিল কাঠামোগত ও অবহেলাজনিত ত্রুটি

রূপনগরে আগুন আইপিডির প্রতিবেদন বলছে, ছিল কাঠামোগত ও অবহেলাজনিত ত্রুটি

নির্মাণ, যানবাহন ও ফুটপাথজুড়ে সিন্ডিকেটের দাপট

কুমিল্লায় বিএনপির অভিনব চাঁদাবাজি নির্মাণ, যানবাহন ও ফুটপাথজুড়ে সিন্ডিকেটের দাপট

চট্টগ্রামসহ ৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

পূর্বের আদেশ বাতিল চট্টগ্রামসহ ৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

মিরপুরের ভয়াবহ আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু

এখনো নিখোঁজ ১৩ জন মিরপুরের ভয়াবহ আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু