আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর প্রবেশপথে কঠোর তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার সকাল থেকে আমিনবাজার, আশুলিয়া, নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়ক ও ঢাকা-আরিচা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এসব জায়গায় যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ, জাতীয় পরিচয়পত্র এমনকি মুঠোফোনের গ্যালারি পর্যন্ত তল্লাশি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস ও ট্রাফিক উত্তর) আরাফাতুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল ও তার ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচিকে ঘিরে জনগণের জানমাল রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে পুলিশের এই অভিযান নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমিনবাজার চেকপোস্টে ঢাকামুখী বাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশ সদস্যরা। সন্দেহ হলে যাত্রীদের মুঠোফোনের গ্যালারি ঘেঁটে দেখা হচ্ছে কোনো ‘সন্দেহজনক ছবি বা বার্তা’ আছে কি না। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, এ ধরনের তল্লাশি তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।

আইনজীবী ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো লিখিত নির্দেশ বা আদালতের অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত ফোন, বার্তা বা ছবি তল্লাশি করা সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ওই অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবন, গোপনীয়তা ও যোগাযোগের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান বলেন, “নিরাপত্তার অজুহাতে যেভাবে ব্যক্তিগত ডেটা ও ছবি যাচাই করা হচ্ছে, তা নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি এক ধরনের ডিজিটাল নজরদারি।”
এদিকে বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল ও মেসে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাঁরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে অধিকাংশের বিরুদ্ধে কোনো নতুন মামলা না থাকলেও তাঁদের আগের অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, বিচারিক অনুমতি ছাড়াই ফোন তল্লাশি, হোটেল অভিযান ও নির্বিচার গ্রেপ্তার আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং এটি গণগ্রেপ্তারের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনছে।