খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক মারমা স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় পাহাড় উত্তাল হয়ে উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর ডাকে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ পালিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
অবরোধকারীরা সকাল থেকেই জেলা সদরের চেঙ্গী স্কয়ার, জিরো মাইল, স্বনির্ভর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ কেটে সড়কে ফেলেন এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। গুইমারার দুর্গম এলাকায় লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে জেলার নয় উপজেলার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অবরোধে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাজেকগামী শত শত পর্যটক। অনেক পর্যটককে শহরে আটকে থাকতে হয়েছে, কেউ কেউ হেঁটে শহরে প্রবেশ করেন। পর্যটক আশুতোষ দত্ত বলেন, “অবরোধের বিষয়টি জানতাম না। এখন পরিবার নিয়ে আটকে আছি, সাজেকে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
এর আগে শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক অংশ নেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চেঙ্গী স্কয়ারে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নেতা কৃপায়ন ত্রিপুরা, কবিতা চাকমা, আকাশ ত্রিপুরা মারমা ও উক্যনু মারমা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, পাহাড়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতিই ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধকে উৎসাহিত করছে।” অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় প্রাইভেট পড়া শেষে ফেরার পথে এক মারমা কিশোরীকে কয়েকজন যুবক তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার সকালে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ শয়ন শীল (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে।
একই দাবিতে বৃহস্পতিবার আধাবেলা অবরোধের পর শনিবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধে নামেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি—পাহাড়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিচারহীনতার অবসান ঘটানো এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে যাতে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”
মানবাধিকার কর্মী ও স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, এ প্রতিবাদ শুধু একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং পাহাড়ে নারী অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। আন্দোলনকারীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।