খাগড়াছড়ির গুইমারায় রোববারের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন ২১ বছর বয়সী চাঁদের গাড়ি চালক তৈইচিং মারমা। সন্তান জন্মের মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রাণ হারানো তৈইচিংয়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পরিবার ও এলাকায়। স্ত্রী তুনি মারমা এখন সন্তান জন্মের অপেক্ষায় অথৈই সাগরে ভাসছেন।
তৈইচিংয়ের মা দানু মারমা বলেন, “আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তার পড়ালেখার জন্যই আমরা এই এলাকায় এসেছিলাম।” বাবা হ্নলাচাই মারমা জানান, “রোববার সকালে তৈইচিং বাসায় ছিল। পরে বাজারে যাওয়ার পথে গোলাগুলিতে সে নিহত হয়।”
সন্ধ্যায় ছেলের ফোনে কল দিলে থানার ওসি ফোন ধরেন এবং জানান ফোনটি তার কাছে। তখনই পরিবার বুঝে যায়, তৈইচিং আর নেই। হ্নলাচাই মারমা বলেন, “আমি মামলা করব না। চাই, সরকার যেন আমার ছেলের স্ত্রীর জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করে।”
ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে তৈইচিংয়ের মরদেহ দাহ করা হয়।
শনিবার স্কুলশিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর খাগড়াছড়ি সদর, পৌরসভা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রোববার রামসু বাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে তৈইচিংসহ তিনজন নিহত হন, আহত হন সেনাবাহিনীর মেজরসহ অন্তত ২০ জন।
সোমবার থেকে রামসু বাজারে সেনা মোতায়েন দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দোকান পুনর্নির্মাণে ব্যস্ত। গুইমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান উসেপ্রু মারমা বলেন, “এটি মারমাদের সবচেয়ে বড় বাজার, আজ হাটবার হলেও কিছুই নেই।”
জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম জানান, “ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় মামলা হবে।” পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, “নিহতের পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।”
মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দিতে গেলে আদিবাসী ক্ষতিগ্রস্তরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। শেফালী মারমা বলেন, “আমার দোকান, ঘর সব পুড়েছে। ৫০ কোটি টাকা দিলেও যা গেছে তা ফেরত আসবে না।” পরে গুইমারা বাজারে বাঙালি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।