সর্বশেষ

দেশে গমের আবাদে ধস, উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১০
দেশে গমের আবাদে ধস, উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে

বাংলাদেশে গমের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গমের আবাদ নেমে এসেছে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হাজার টন কম গম উৎপাদিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব, জলবায়ু পরিবর্তন, রোগবালাই, আধুনিক চাষপদ্ধতির অভাব এবং কৃষকদের পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়াই এই পতনের মূল কারণ।

 

গত চার বছরে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১–২২ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টন। ২০২২–২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৭০ হাজার টনে। ২০২৩–২৪ সালে উৎপাদন হয় ১১ লাখ ৭২ হাজার টন। কিন্তু ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ১১ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টনে।

 

উত্তরের জনপদে গম চাষের জন্য উপযোগী আবহাওয়া থাকলেও, গত দুই বছর ধরে সেখানেও চাষ কমে গেছে। লালমনিরহাটের কৃষক ফাহিম জানান, সরকারি বা বেসরকারি ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় উৎপাদিত গম বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে কৃষকরা গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে গমের চাহিদা ৭০–৭৫ লাখ টন। এর মধ্যে মাত্র ১১ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি ৬০–৬৪ লাখ টন রাশিয়া, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুস সাত্তার মন্ডল বলেন, “আমদানি নির্ভরতা কোনো টেকসই সমাধান নয়। বরং চালের গুড়ো বা ভুট্টার আটা ব্যবহারে মনোযোগ বাড়ানো দরকার।”

 

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জাহেরুল ইসলাম জানান, “আমরা উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে কাজ করছি, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। কিন্তু কৃষি নীতিমালার দুর্বলতার কারণে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।”

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গম উৎপাদনে এই ধস অব্যাহত থাকলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। এখনই প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কৃষকবান্ধব নীতিমালা।

সব খবর