রাজধানীতে আয়োজিত হচ্ছে আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা। শুক্রবার ও শনিবার (২১ ও ২২ নভেম্বর) মিরপুর-১৩ এর পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আয়োজন। উন্নয়ন সংগঠন নাগরিক উদ্যোগ ও আদিবাসী সুহৃদদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা ইতোমধ্যেই রাজধানীবাসীর কাছে সমাদৃত হয়ে উঠেছে।
আয়োজক কমিটির সদস্য মিঠুন রাকসাম জানিয়েছেন, আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা-২০২৫ এর মূল লক্ষ্য হলো শহুরে নাগরিকদের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জুম কৃষি ও ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী বলেন, আদিবাসী উদ্যোক্তারা যেন বেশি বেশি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারেন সেই তাগিদ থেকেই এ আয়োজন। তিনি জানান, টানা চার বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আয়োজক মেইনথিন প্রমীলা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টল বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়ার পর ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যেই স্টল বুকিং করেছেন। নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজধানীর ভোজনরসিকদের কাছে পরিচিত পাহাড়ি নারীদের পরিচালিত হেবাং রেস্তোরাঁও অংশ নিয়েছে মেলায়।

স্টলগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে তেল ও মসলামুক্ত ঐতিহ্যবাহী খাবার, পাহাড়ের জনপ্রিয় ব্যাম্বু শুট, কলা পাতায় রান্না করা হেবাং, পাহাড়ি মুরগি, কাপ্তাই হ্রদের মাছ এবং নানা জুমিয়া সবজি। দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারছেন পাহাড়ি খাবার পাজন।
সমতলের আদিবাসী উদ্যোক্তারা হাজির হয়েছেন বৈচিত্র্যময় খাবারের পসরা নিয়ে। মনিপুরী, গারো ও রাখাইনরা পরিবেশন করছেন কালো ও সাদা বিনি চাউলের পিঠা। রাখাইনরা এনেছেন নানা ধরনের মুন্ডি। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আছে পাহাড়ের বাঁশের হুক্কা, যা স্থানীয়ভাবে “বাঁশ দাবা” নামে পরিচিত। এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে টাটকা ফলের ঝাল আইটেম লাকসো, পাহাড়ি মধু এবং বিভিন্ন জাতের বিনি চাউল।
মেলায় আরো আছে জুমের শাকসবজি, ফলমূল, নানা জাতের কৃষিপণ্য এবং শুঁটকির পসরা। আয়োজকরা বলছেন, এসব পণ্য শহুরে জনগণকে আদিবাসী কৃষির বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিচিত করবে।
মেলার পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
- ২১ নভেম্বর: জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জলিপ্রু মারমা ও সমান্তর চাকমা গান পরিবেশন করেন।
- ২২ নভেম্বর: মঞ্চ মাতাবেন বাংলাদেশ আইডল মং, সংগীতশিল্পী কুলিন চাকমা এবং গারো শিল্পী মার্কুস চিসিম। এছাড়া পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনা থাকবে।
আয়োজক মেন্টল চাকমা বলেন, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় খাবার আমাদের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মেলার মাধ্যমে বাঙালি জনগণের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে আদিবাসী খাবারের মেলবন্ধন ঘটানোই তাদের লক্ষ্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রথম দিনব্যাপী এই মেলায় ব্যাপক লোকসমাগম হয়েছে। আয়োজকরা আশা করছেন, আগামীকালও এই ধারা বজায় থাকবে।
মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন থেকে রিকশায় মাত্র পাঁচ মিনিটে মেলার স্থলে পৌঁছানো যায়। কাছেই রয়েছে স্কলাসটিকা ও এসওএস শিশু পল্লী, বিপরীতে বিআরটিএ কার্যালয়।