রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, তিস্তা ও ধরলা নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় মৌসুমি কর্মসংকটে দিশেহারা হাজারো কৃষিশ্রমিক। আমন ধান কাটার মৌসুম শুরু হতে এখনও দুই-তিন সপ্তাহ বাকি। এরইমধ্যে কাজের অভাবে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। নদীভাঙন ও কর্মসংকট মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিন কাজের খোঁজে ঘুরেও কাজ না পেয়ে কেউ অগ্রিম শ্রম বিক্রি করছেন, কেউ মহাজনের কাছে উচ্চসুদে ধার নিচ্ছেন। অথচ এই সময়েই হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা ছিল, যা এখনও শুরু হয়নি।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী মহর আলী বলেন, “ধান কাটার মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। সংসার চালাতে মহাজনের কাছ থেকে উচ্চসুদে টাকা ধার নিতে হচ্ছে।”
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের আকলিমা বেগম জানান, “অক্টোবরের শুরু থেকেই আমি ও আমার স্বামী বেকার। ধারকর্জ করে দিন চলছে।”
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর মহিপুর গ্রামের আফতাব উদ্দিন বলেন, “মৌসুমে দিনে ৪০০–৫০০ টাকা আয় হতো। এখন ৩০০ টাকায় অগ্রিম কাজ বিক্রি করেছি।”
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের সলেম আলী জানান, “গত বছর ৪০ দিনের প্রকল্পে কাজ পেয়েছিলাম, এবার এখনও শুরু হয়নি।”
স্থানীয় কৃষক ও মহাজনেরাও চাপের মুখে। বড়ভিটা গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, “অনেকে অগ্রিম টাকা চাইছেন, সবাইকে দেওয়া সম্ভব নয়।”
চর কালমাটির মহাজন মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন কেউ না কেউ ধার চাইতে আসে। অল্প সুদে টাকা দিয়েছি, ধান কাটার সময় তারা পরিশোধ করবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম জেলা উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “এই শ্রমসংকট নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে। প্রতি বছরই এই সময় কৃষিশ্রমিকেরা বেকার থাকেন।”
ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার প্রায় ৬৮ হাজার হতদরিদ্র পরিবার ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় তালিকাভুক্ত। প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তারা ১৬ হাজার টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার পিআইও এইচ এম মাজাহানুর রহমান বলেন, “বরাদ্দ পেলেই প্রকল্প শুরু হবে।”
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল মতিন জানান, “এ বছর এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে।”
এই প্রকল্পের আওতায় শ্রমিকেরা গ্রামের কাঁচা রাস্তা সংস্কার, ধর্মীয় স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে মাটি ভরাটের মতো কাজ করেন। বরাদ্দ বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো শ্রমজীবী মানুষ। ফলে ‘মঙ্গার’ পুরনো আতঙ্ক আবারও ফিরে আসছে উত্তরাঞ্চলে।